• ৩ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতি ১৯ জুন ২০২৫ ই-পোর্টাল

Janatar Katha

Banner Add
  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও
  • এছাড়াও
    • উৎসব
    • ব্যবসা
    • স্বাস্থ্য
    • শিক্ষা
    • প্রযুক্তি
    • হেঁসেল

Literature

নিবন্ধ

শেষ দেখা (শেষ পর্ব) -ছোট গল্প

সুমেধা নাতির সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর ওকে ভিতরে যেতে বলে কাজের লোকের সাথে ভেতরে পাঠিয়ে দেন।অর্ক তনির এগজ্যাক্টলি কি হয়েছে আমাকে বল। আকুল হয়ে মাতৃ হৃদয় জানতে চায়। ডাক্তার সুমেধা নামা সুমেধা জানতে চায়।ওর বাবা তো আমাকে বরাবর বলে মেয়েটা কেন যে ওদেশে থেকে গেল আজও বুঝলাম না। আমাদেরও এত বছরের মধ্যে একবার ওখানে যেতে বলেনি। আমরা নিজেরা একবার যখন গেলাম ও এসেছিল আমাদের সাথে দেখা করতে কিন্তু ও কোথায় , কার সাথে থাকে কিছুই জানায়নি। আজ বুঝতে পারছি কেন আমাদের সাথে দূরত্ব তৈরি করেছিল। এসব কথা তন্দ্রার মা বলতে থাকেন।অর্ক,আমিই দায়ী তোমাদের জীবন নষ্ট করার জন্য। আমি তখন ডাক্তার হিসেবে না মা হিসেবে ওদের দু বোনকে বুঝতে হতো। চন্দ্রা কে বাঁচাতে আমি তন্দ্রার স্বপ্ন, আনন্দ সব বলি দিয়ে ফেললাম। আমি বুঝতেই পারিনি তোমাদের সম্পর্কটা এত গভীর ছিল। আমাকে ক্ষমা কর অর্ক।এখানে কারো কিছু করার ছিল না। যা ভবিতব্য ছিল হয়েছে।তবে ঈশ্বর মনে হয় আমাদের একটা সূযোগ দিয়েছেন।কি রকম?আজ আমার অনেক কিছু বলার আছে তোমার আর কাকুর কাছে। চন্দ্রার সাথে বিয়েটা আমি বাধ্য হয়েই করছিলাম। তোমার মুখের উপর না বলতে পারিনি যেমন, তেমন তন্দ্রার উপর অভিমানেও। আমাকে ভূল বুঝে কিছু না জানিয়ে না বলে, বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল আর সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। জানতে দিল না কি বুঝলো আর কেন? আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিল না। খুব রাগ হয়েছিল। তাই চন্দ্রা কে ভালো না বা হলেও বিয়েটা করলাম। ভাবলাম চন্দ্রা তো আমাকে ভালোবাসে ও খুশি থাক। ওর মানসিক অবস্থা দেখে তখন আমি আর কিছুই ভাবিনি। কিন্তু সব ভুল ছিল। চন্দ্রা যখন বলল শুধুমাত্র তন্দ্রার কাছ থেকে আমাকে দুরে সরাবে বলে ও এই, নাটকটা করেছে তখন আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেছিল। আমি যে কত বড় ভুল করেছি বুঝতে পারি আর আমার সেদিন থেকে শুরু হয় নতুন একটা লড়াই। কাকীমা হয়ত কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলে। আজ তাই তন্দ্রা যখন ফিরে এসেছে আমি চাই ওর এই বিপদের সময় আমি ওর সাথে থাকি। আর বাকি জীবনটা আমি ওকেই দিতে চাই। হয়তো ভাবছো চন্দ্রা কি করবে?চন্দ্রা নিজেই আমাকে বলেছে ও এন জি ও র কাজ নিয়ে উত্তর ভারতে চলে যাবে। আর ও তো কোনো দিন এই সম্পর্কটাকে গুরুত্ব দেয়নি। আজ যখন আমি একটা প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেয়েছি সেটা করতে চাই।অর্কর কাছ থেকে এত কথা শোনার পর তন্দ্রার বাবা তন্ময় বাবু বলেন এতদিনে আমার কাছে পুরো চিত্রটা পরিস্কার হলো। মেয়েটা আমার কোনো দিন মুখে কিছু বলেনি, যত কষ্ট সবসময় আমাদের থেকে আড়াল করে গেছে। চুনি (চন্দ্রার ডাক নাম) ছোটবেলা থেকেই ওকে হিংসা করত। অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু ওর কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাবলে ও যে এরকম করতে পারে আমি তো ভাবতে পারছি না। আমি তো ভেবেছিলাম ও আর অর্ক পরস্পরকে পছন্দ করে। কিন্তু কোথাও যে একটা ছন্দের অমিল রয়েছে সেটা বারবার মনে হয়েছে কিন কি সেটা বুঝতে পারিনি। আজ বুঝতে পারলাম। আমি বলছি অর্ক তুই যা তনিকে সময় দে। ও একটু শান্তি পাক। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার এই মেয়েটা।আচ্ছা আচ্ছা সব অর্ক যা ভালো মনে করবে হবে কিন্তু তনির ট্রিটমেন্ট কোথায় হবে? ওদেশে যদি হয় তবে তো ও একা। আমরা নাহয় মাঝে মাঝে গেলাম। কিন্তু এখানে আমরা সবাই আছি এখানে তো হতেই পারে। তুই আছিস আমি আছি আমাদের পরিচিত ডাক্তারেরা আছে, বলেন তন্দ্রার মা।দেখা যাক তন্দ্রার সাথে কথা না বলে তো কিছু করা যাবে না। ওর মতামত জানতে হবে।ওখানে কি সব ব্যবস্থা করা আছে? মানে অপারেশনের ডেট নেওয়া আছে? তন্দ্রার মা তন্দ্রার কে জিজ্ঞাসা করেন।মোটামুটি সব ঠিক করা আছে। কিছু মেডিসিন চলছে আমি স্পেশাল পারমিশন নিয়ে এসেছি। ওখানে গিয়ে দেখাবার পর ডেট ফিক্সড হবে।এখানেও তো চিকিৎসা এখন ভালো হয়,আমরা আছি, এখানে একবার কথা বললে হয় না? অর্ক তো এখন ভারতের একজন নামকরা ডাক্তার; ওর চেনা পরিচিত কতজন আছে। তুই একবার ভেবে দেখ মা।মায়ের কথা চুপ করে শোনে তন্দ্রা। কিছু বলতে পারে না গলা বন্ধ হয়ে আসে। ভাবে মা ,এইরকম ভাবে কেন এতদিন ডাকো নি। আমি চাইলেও কি এখন থাকতে পারব? আমারও যে ইচ্ছা করছে না যেতে। কতদিন পর সবাই একসাথে হয়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে ওর চোখ ভিজে আসে। মাকে বলে তোমার কোলে মাথা দিয়ে একটু শোবো? তুমি আজ আমার কাছে থাকো।মা আদর করে কোলে টেনে নেয়। মায়ের চোখেও আজ জল।মা মেয়ের এই দৃশ্য বাইরে থেকে দেখে চন্দ্রিল। ওর খুব ভালো লাগে মায়ের এই আনন্দ দেখে। ছোটবেলা থেকেই মাকে একা সব করতে দেখছে। আনন্দ করতে মা কে দেখেনি। ওর খুব ভালো লাগছে দেখে।এখানে একা দাঁড়িয়ে কেন? কিছু লাগবে? জিজ্ঞাসা করে চন্দ্রা। না না কিছু না। আমি এমনিই দাঁড়িয়ে আছি।আমাকে বলতে পারো কোনো অসুবিধা হলে। আমি তো তোমার মাসি, মায়ের দিদি। আমাকে মামনি ও বলতে পারো।আচ্ছা ঠিক আছে। বলে ওর ঘরে চলে যায়। ওর ও আজ চোখে জল বাধা মানছে না। এত আপনজনের মাঝে ওর খুব ভালো লাগে।ও ভাবে মা যদি এখানে থেকে যায় তাহলে হয়তো মা সুস্থ হয়ে যাবে। মাকে একবার বলে দেখবে। এটাও ঠিক এতদিন গ্র্যানি আমাদের দেখে রেখেছে তাকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে মা হয়তো এরকম ডিসিশন নেবে না। তবুও একবার বলতে হবে।এইসব, ভাবছে এমন সময় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ।বাইরে দাঁড়িয়ে অর্ক, দেখে চন্দ্রিল। প্লিজ ভেতরে আসুন।তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।বলুন, আগে বসুন।হুমম, বলে চেয়ারটি টেনে নিয়ে বসে।তুমি বড়ো হয়েছো তোমার মতামতের একটা মূল্য আম কাছে আছে। তার আগে বলো তুমি সব জানো তো? আমি কে? তোমার আমার সম্পর্ক কী?অর্কর দিকে তাকিয়ে চন্দ্রিল বোঝার চেষ্টা করে ঠিক কি বলতে চাইছেন ওকে এই মানুষ টা। মুখে বলে হুমম্ জানি।বেশ তাহলে তো ভালোই হলো। এখন তোমাকে আমি যেটা বলব ভালো করে শুনবে। তারপর ভেবে চিন্তে উত্তর দেবে।বলুনতোমার মায়ের ডিজিজের ব্যাপারে তুমি কতটা জানো?মা আমাকে যেটুকু বলেছেন। মায়ের ব্রেইনে একটা টিউমার হয়েছে যেটা অপারেশন করা কঠিন, কিন্তু না করলে যে প্রবলেম গুলো হবে সেটা আরও ডেঞ্জারাস। অপারেশন যদি সাকসেসফুল হয় তাহলে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকবে কিছুদিন। আমি জানি মা বেশি দিন থাকবে না। তাই তো আমাকে নিয়ে এসেছে। অসহায় ভাবে কথাগুলো বললো চন্দ্রিল।ওর কাছে এইভাবে কথা গুলো শুনে অর্কর চোখ ভরে এলো; নিজের অজান্তেই কখন যেন ছেলেকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।এভাবে জড়িয়ে ধরাতে চন্দ্রিল হতবাক হয়ে যায়। ও তো ভাবতেই পারেনি এরকম কিছু হবে।অর্ক বলে আমি আছি তো, কোনো চিন্তা করোনা। এখন আমাদের স্টেডি হয়ে মায়ের পাশে থাকতে হবে। তুমি তো যথেষ্ট ব্রেভ বয়।এখন চলো মায়ের সাথে কিছু কথা বলি। এই বলে ছেলেকে নিয়ে তন্দ্রার ঘরে গেল।তন্দ্রা তখনও মায়ের কোলে শুয়ে আছে।চন্দ্রিল ঢুকে বলে ওয়াও মা তুমি এখনও মায়ের আদর খাচ্ছো? দারুন ব্যাপার, আমার খুব খুশি লাগছে।ওর এই কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।ও একটু বিস্মিত হয় এই ভেবে যে হাসির কি হলো!তখন তন্দ্রার মা বলেন দাদু ভাই ওটা হবে আমি খুব খুশি হয়েছি।ও আচ্ছা।এরপর ওরা সবাই তন্দ্রার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। এর মধ্যে শুচি আসে। ও যোগ দেয় ঐ আলোচনায়।ঈশ্বর মনে হয় বসেই থাকে আমরা যা ভাবব তার উল্টো করার জন্য। আমাদের চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী সব ঘটনা ঘটলে মনে হয় ঈশ্বরের আসন টলে যেতে পারে স্বয়ং ঈশ্বর তাই সব ঘটনা গুলো উল্টে পাল্টে দেয়। তাই মনে হয় জীবনের সব চাওয়া গুলো আর পাওয়া হয়ে ওঠে না;অর্ক ভাবতে থাকে।খুব কি বেশি চেয়ে ফেলেছিলাম? এত বছর পরে ,এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরে একটু সাথে থাকতে চেয়েছি মাত্র। না আর যেন কিছু ভাবতে পারছে না অর্ক।অপারেশন টা সবার কথা মতো এখানেই হয়। তন্দ্রার শুধু একবার ওদেশে একবার যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, ওখানে যে ও আরেক মা কে রেখে এসেছে। ফোনে তার সাথে কথা বলে সব জানায়। অর্ক তাকে বলে যদি উনি আসতে চান তাহলে ও সব ব্যবস্থা করে দেবে। সব কিছু ঠিক করে অর্ক ওর বন্ধু স্থানীয় বিখ্যাত ডাক্তারকে দিয়ে অপারেশন করায়, নিজে সঙ্গে থাকে। নিজে করেনি কারণ আপনজনের অপারেশন নিজে করা যায় না। সব ঠিক ছিল। দুদিন পর হঠাৎ জটিলতা দেখা দেয়। কিছুক্ষনের জন্য জ্ঞান আসে আর তখন ও সবাই কে একসাথে দেখতে চায়। আর তার সাথে মিসেস টেলর কে দেখতে চায়। এর পরেই জ্ঞান হারায়।ওর ইচ্ছা কে সম্মান জানিয়ে অর্ক লন্ডনে ফোন করে মিসেস টেলরকে আসতে বলে। উনি ও খুব উতলা হয়ে ওঠেন। ওনার কথা শুনে মনে হয় যেন নিজের সন্তান অসুস্থ হয়ে পরেছে। অর্ক অবাক হয়ে যায় ওনার এই রকম উৎকন্ঠা দেখে। ও সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যবস্থা করে দেয় ওনার আসার;সাত দিনের মধ্যে যাতে উনি আসতে পারেন। এদিকে চলে তন্দ্রাকে নিয় যমে মানুষে টানাটানি। কেউ আর নিজের কাজে ফিরে যেতে পারে না। সবার মন পড়ে থাকে তন্দ্রার কাছে। সবাই মনে একটাই কথা ভাবে কেন এমন হলো? কি হবে শেষ পর্যন্ত?এরমধ্যে সবাই কে অবাক করে দিয়ে চন্দ্রা চন্দ্রিলকে নিজের কাছে টেনে নেয়। ওর দেখাশোনা, ওর ভালো থাকা সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়।তন্দ্রার মা, বাবা বয়স হলেও সারাদিন প্রায় থেকে যান হাসপাতালে। চন্দ্রা মা বাবাকেও সামলায়।অর্ক বেশি সময়টাই বসে থাকে তন্দ্রার কাছে। মনে হয় একবার যখন ফিরে পেয়েছি আর হারাতে দেব না এরকম ব্যাপার।কিন্তু বিধির বিধান মনে হয় তা যেন ছিল না। সাত দিনের মাথায় মিসেস টেলর হাসপাতালে পা দিতে জ্ঞান আসে আবার তন্দ্রার। ওনার হাত ধরে তন্দ্রা শুধু বলে চাঁদ রইলো; অর্ককে দেখিয়ে বলে ওর বাবা।অর্ক বুঝতে পারে আর সময় নেই তন্দ্রার দুই হাত চেপে ধরে যেনো যেতে দেবে না কিছুতেই। কিন্তু সেতো আর হয়না। যখন, যার, যেখানে যাবার সময় আসবে তখন, তাকে, সেখান থেকেই চলে যেতে হবে। তন্দ্রাও অর্কর হাতে হাত রেখেই পাড়ি দেয় ওপারে। যেখানে সব কষ্ট দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেই রাজ্যে।যাবার আগে শেষ বারের মতো সবাই কে দেখতে পায়। সবাই কে মিলিয়ে দিয়ে যায়। দিদিকে দিয়ে যায় সন্তান সহ সংসার, যা ও পেতে পারত। মা বাবা কে সান্ত্বনা হিসেবে দেখিয়ে দেয় মিসেস টেলর কে, যে নিজের সন্তানকে হারিয়ে একা বাঁচত, আবার অজানা একজনকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত তাকেও হারালেন। অর্ককে দিয়ে গেল আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি।নিজের জীবন থেকে নিজে মুক্তি পেলো সবার সঙ্গে শেষ বারের মত দেখা করে, যত ভুল বোঝা ছিল সব মিটিয়ে। ছেলেকে বাবার কাছে দিয়ে তন্দ্রা পাড়ি দিল আনন্দের রাজ্যে।শ্রীমতি রাখি রায়বর্ধমান-সমাপ্ত-

মে ০১, ২০২২
নিবন্ধ

শেষ দেখা (দ্বিতীয় পর্ব) -ছোট গল্প

বেলা তখন এগারো টা হবে কলিং বেল বেজে উঠল। বিতান দরজা খুলতে গেলে তন্দ্রা ওর বিছানায় উঠে বসে; মনের কোনে আজও একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে দেখে ও নিজেই খুব অবাক হয়। আজও কি তাহলে অন্তরের গভীরে রয়ে গেছে অর্কর প্রতি ভালোবাসা!ধীর পায়ে বেরিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে। ওর পিছনে ছায়ার মত আসে চাঁদ; একটু যেন চমকে গেল অর্ক। এটা কে? নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করে। এ যে আমার ছোট বেলা ভাবে অর্ক। এসব ভাবতে গিয়ে খেয়াল করে নি সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তন্দ্রা।কেমন আছো? জিজ্ঞাসা করে তন্দ্রা।ওর ডাকে সম্বিত ফিরে আসে অর্কর। হ্যাঁ, ভালো আছি। বলে তাকায় তন্দ্রার দিকে। তন্দ্রার শরীরের কথা শুনেছে বিতানের কাছে। তবুও চোখের সামনে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। ভাবে সেই সুন্দর তন্বী মেয়েটা রোগের কারণে কি হয়েছে।তন্দ্রা ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে ওঠে তুমি যে সময় বের করে আসতে পেরেছ সে জন্য ধন্যবাদ।এতক্ষণে নিজের মধ্যে ফিরে আসে অর্ক, বলে আসতে তো আমাকে হতোই। আমার যে অনেক কিছু বলার ছিল যা বলার সুযোগ পাইনি।ওদের এই কথোপকথনের মধ্যে শুচি উঠে রান্না ঘরের দিকে যায় এবং বিতানকে ইশারায় ডেকে নিয়ে যায়।অর্ক বুঝতে পারে না কিভাবে শুরু করবে। তন্দ্রার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করে দে।আমার প্রতি তোর অনেক অভিযোগ আছে আমি জানি। আমি যে এতগুলো বছর মনে কি গ্লানি বয়ে বেরাচ্ছি সে আমিই জানি। তুই এখন আর বিশ্বাস করবি না আমি জানি,তবু বলছি। আমি বাধ্য হয়েছিলাম সেদিন।অর্ক বলতে থাকে, তন্দ্রা আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়েটা করিনি। আমি চাইই নি বিয়েটা করতে। আমি তো তোকে ভালোবেসেছি। আমি শুরু থেকেই তোকে ভালোবাসি, তোর সাথেই জীবন কাটাতে চেয়েছি। কিন্তু উভয়ের পড়া আর কেরিয়ারের কথা ভেবে বলা হয়ে ওঠেনি। তাই সেবার দিল্লিতে সেমিনারে্ গিয়ে যখন শুনলাম তুই বাইরে হায়ার ডিগ্রীর জন্য যাওয়ার চেষ্টা করছিস তখন তোকে আমার মনের কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।আর বলেও দিলাম কোনো কিছু না ভেবে। আমি কিন্তু জানতাম না ঠিক কি হবে তোর উত্তর। তবে আমার উপর তোর ভরসা আর বিশ্বাস দেখে মনের কোনে একটা আশা ছিল আবার ভয়ও ছিল যদি আমার জন্য তোর মনে সেরকম কিছু না থাকে তাহলে নিজের কাছে ছোটো হয়ে যাব। তুই যদি অন্য কাউকে পছন্দ করিস। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বলেও দিলাম। তোর কাছে যখন সাড়া পেলাম তখন আমার কি অবস্থা হয়ে ছিল সেটা তো তুই সবথেকে ভালো জানিস।তার ফল যে তুই পেয়েছিস সে তো দেখলাম তোর সাথে রয়েছে।ওই রকম আনন্দ আমার আগে হয় নি; কলকাতা ফেরার পর সেদিন প্রথম বাড়ি ফিরে চন্দ্রিমাকে ফোন করে ডাকি। ওই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আর তোর দিদি তাই ওকে ই খবরটা প্রথম দেব ঠিক করি আর ওর মাধ্যমে আমাদের বাড়িতে জানাব এটাও ভাবি। কিন্তু ও জানার পর যেটা ঘটল সেটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। আমি তো ভাবতাম ও কাউকে পছন্দ করে, ওর কাছে সেরকমই শুনেছিলাম। যদিও খোলাখুলি কিছু বলেনি কোনো দিন। আমি তো খুব ভালো বন্ধু ছাড়া ওকে কখনো কিছু ভাবিনি। অতি উৎসাহিত হয়ে ওকে সেদিন কথাটা বলতে যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। আমি ভাবিনি নিজের দিদি হয়ে এইভাবে হিংসা করতে পারে। আমার সম্বন্ধে এরকম ভাবতে পারে সেটাও বুঝিনি। ওর সাথে যখন এই নিয়ে কথা, তর্ক বিতর্ক চলছে তখন তুই এসেছিলি, আমি মায়ের কাছে পরে শুনলাম। আমি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই ঘটল।তুই অভিমান করে চলে গেলি, কোনো রকম কোনো যোগাযোগ করলি না, করার পথ ও বন্ধ করে দিলি। আমি তখন তোর দিদির অভিনয়ের কাছে অসহায়। সবাই তখন আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে লাগল। আমার মা,বাবা, তোর মা সবাই। ডাক্তার বললেন ওকে কোনো রকম মানসিক চাপ দেওয়া চলবে না। তখন বাধ্য হয়ে আমি বিয়েতে রাজি হই। ও আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি। শুধু তোর প্রতি হিংসা করে, তোর কাছ থেকে আমাকে দুরে সরিয়ে নিতে এই বিয়ে। প্রথম প্রথম তোর কথা উঠলেই সিনক্রিয়েট করত। তারপর থেকে আমি চুপচাপ থাকি। ও ওর কাজে সফল হয়েছে। ও আমাকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল সেটা পেরেছে।অর্ক ঝড়ের মতো কথাগুলো বলে গেল। এমন সময় শুচি খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ঢুকল।কিছু মনে করোনা তোমার শেষের কথাগুলো কিছুটা শুনেছি, তুমি আমাদের জানাতে পারতে। তুমি কিছু ই বলোনি, শুধু বারবার তন্দ্রার খোঁজ করতে।ওটা আমার খুব ভুল হয়েছে, সেসময় তোদের সব জানালে ভালো করতাম। আজ তোদের আর আমার কথা বিশ্বাস হবে না। বিশ্বাস করা না করা তোদের ব্যাপার। আমার বূকের উপর একটা পাথর চাপানো ছিল এতদিন আজ তন্দ্রাকে সব বলে কিছু টা হালকা লাগছে। হ্যাঁ, আর একটা কথা যেটা না বললে সম্পুর্ণ হবে কথা। আমাদের শুধু বিয়েটাই হয়েছে। ও চেয়েছিল তন্দ্রাকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে, আমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে ও সেটা এক সপ্তাহের মধ্যেই নিজের মুখে আমাকে বলেছে। সেদিন থেকে ও আমার কাছে পৃথিবীর জঘন্যতম মানুষ। আমি চেষ্টা করি সবসময় ওর সামনে না পড়তে। আমাদের দেখা হয়না বললেই চলে। ও থাকে ওর জীবন নিয়ে। ওর কলেজ, আউটিং, পার্টি এসব নিয়ে।তবে ইদানিং যেন একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। জানিনা তার মধ্যে আবার কিছু আছে কিনা!তন্দ্রা এই কথাগুলো শোনার পরে অর্কর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালো যার মধ্যে কোনো ক্ষোভ, দুঃখ, রাগ কিছু তো ছিলই না বরং একটা কষ্ট, সহানুভূতি দেখতে পেল শুচি।অর্ক এবার তন্দ্রাকে বলল আমার উপর রাগ, অভিমান, ঘৃণা এসব বুকে নিয়ে চলে গেছিলি তো আমি বুঝেছিলাম তখনই যখন মা আমাকে বলেছিলেন তুই এসেছিল। কিন্তু এতবড় একটা খবর তুই আমার থেকে আড়ালে রাখলি!! এতটা অবিশ্বাস!!না না, তা নয় বলে ওঠে তন্দ্রা।তবে আজ যখন তুই এই অবস্থায়, ছেলে এতবড় হয়ে গেছে তখন তুই আসলি, কেন আগে আমাকে বলিসনি?আমি চলে গেছিলাম ঠিক। রাগ হয়েছিল নিজের উপরে। যে আবেগ আমি ধরে রেখেছিলাম এতদিন কেন সেটা ভাবলাম সেই ভেবে খুব রাগ হয়েছিল নিজের উপর। তাই ঠিক করছিলাম তোমাদের জীবন থেকে নিজেকে অনেক দুরে সরিয়ে নিয়ে যাব। তাই পরেরদিন বাড়ি থেকে দিল্লি চলে গেলাম, সাতদিনের মধ্যে লন্ডন।কিন্তু ভাগ্য আমাকে সাথ দিল না। আমি তোমাকে ভুলব ভাবলে কি হবে, ভোলার পথ তো ঈশ্বর বন্ধ করে দিয়েছে সেদিন রাতে।যেদিন বুঝতে পারলাম সেকথা প্রথমে তোমাকেই জানাবো বলে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন ধরলো তোমার স্ত্রী। সেকথা শুনে আমার কি হয়েছিল জানিনা। তবে জ্ঞান ছিল না। যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে হসপিটালের বেডে দেখলাম।তারপর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফোন করে জানতে পারলাম দিদির সাথে তোমার বিয়ের কথা। মা তখন বলেছিল তোকে জানাই নি, তুই কষ্ট পাবি। আর তুই তো এখানে নেই। দু বোনের এই নিয়ে বিবাদ হোক আমি চাই নি। আমি মাকে আর কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি। আর কিই বা জিজ্ঞাসা করতাম?আমার তখন বলার কিছু ছিলনা। আমি শুধু বলেছিলাম, তাহলে আমি দুরেই থাকি, দেশে আর ফিরে যাব না।তাই আর দেশে সেভাবে আসা হয়নি। আর তোমার জীবনে আমার জন্য যাতে কোনো অশান্তি না হয় তাই বলিনি কিছু।জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলাম নিজের মত করে।আমার এই লড়াইয়ে আমাকে সাথ দিয়েছে আমার রুমমেট আফরিন আর ছিলেন, না ছিলেন কেন আজও আছেন আমার বাড়িওয়ালা মিসেস টেলর। আমরা ভারতীয়রা ভাবি না যে ইউরোপীয় মহিলাদের মধ্যে মাতৃত্ব বোধ নেই! একদম ভুল ভাবনা। আজ পর্যন্ত উনি আমাকে এবং আমার ছেলেকে যেভাবে আগলে রেখেছেন কোনো ভারতীয় মহিলা পারবে না। আমার প্রতি ওনার স্নেহের কারণ ওনার মৃতা মেয়ে। সে নাকি আমার মতো ছিল অবশ্যই ইউরোপীয় ভার্সন বলে একটু হাসার চেষ্টা করে তন্দ্রা।আজও আমি ওনার কাছেই থাকি। মায়ার বাঁধনে বাঁধা পড়েছি আমিও।যাক সেসব কথা। আমি তোমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে চাই নি কারণ আমি ভেবেছিলাম আমি তোমার আর দিদির মাঝে অযাচিতভাবে অনুপ্রবেশ করে ফেলেছি। সেদিন যা ঘটে ছিল সেটা সাময়িক আবেগ। আমি ভেবেছিলাম তুমি দিদিকে ই ভালোবাসো। আমি ভাবিনি দিদি আমার সাথে এরকম করতে পারে। আমার রাগ হয়েছিল মায়ের উপরে , পরে ভাবলাম মা হয়ত দিদির আর তোমার ব্যাপারটা জানত। এটা ভাবলাম কারণ আমি যখন বলেছিলাম তখন মা এমনভাবে অবাক হয়েছিল যেন আমার কথাটা অসম্ভব। তাই আমি আর কোনো কথা কাউকে জানাইনি। শুধু শুচি জানত পরে বিতান জেনেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বলে অসহায় ভাবে তাকালো তন্দ্রা। সেই আসতে হলো আর তোমার সামনাসামনি হতেও হলো এই ছেলের জন্য। এত কথা একসঙ্গে বলে তন্দ্রা হাঁফাতে লাগলো। শরীর খুব দুর্বল।অর্ক শুচিকে বললো ওকে ঘরে নিয়ে যা, রেস্ট নিক। অনেকক্ষন বসে আছে। আর ওর ছেলেকে পাঠিয়ে দে আমি একটু কথা বলি।শ্রীমতি রাখি রায়বর্ধমানক্রমশঃ ...

এপ্রিল ২৪, ২০২২
নিবন্ধ

শেষ দেখা (প্রথম পর্ব ) -ছোট গল্প

মানুষের জীবনে কিছু ঘটনা এমনভাবে ঘটে সেই মূহুর্তে তার ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে জীবনের হিসেবটাই পাল্টে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু যে বা যারা তারা সেই সময় ঘটনার স্রোতে ভেসে যায়। এরফলে বেশির ভাগ মানুষ পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়। আবার জীবন সায়াহ্নে এসে মনে যদি হয় পিছনে ফেলে আসা দিনে ফিরে যাই সেটা কি সম্ভব?এসব ভাবতে ভাবতে কলকাতায় পৌঁছে গেল তন্দ্রাদের প্লেন;তন্দ্রা আর ওর ছেলে চন্দ্রিল। আজ নতুন বছরের প্রথম দিন ; বহুবছর পর দেশের মাটিতে পা দিল তন্দ্রা।ওদের এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে এসেছে তন্দ্রার ছোটোবেলার বন্ধু বিতান আর শূচি।। ওরা এখন স্বামী স্ত্রী। এতদিন দেশের বাইরে থেকেও ওদের মাধ্যমেই দেশের সব কথা জানতে পারে তন্দ্রা। সত্যি বন্ধুত্ব কাকে বলে ওদের দেখলে বোঝা যায়।সেই ছোটো থেকে ওরা তিনজন একসাথে আছে। সমাজের যে তলাতেই ওদের অবস্থান হোক না কেন। ওদের বন্ধুত্বের মাঝে কোন কিছু আসেনি কখনো।বেরিয়ে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরস্পর কে জড়িয়ে ধরে ওরা। যেন ছোটো বেলায় ফিরে গেছে।তিনজনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে,চেহারার।চোখের নিচে বলিরেখা, মাথার চুল রূপোলী হয়েছে, তবুও মন যেন আজ আবার ছেলে বেলায় ফিরে গেছে।চন্দ্রিল মায়ের এই আনন্দ দেখে অবাক হলেও আশ্চর্য হয়নি। কারণ মায়ের কাছে এই দুই বন্ধুর কথা অনেক শুনেছে ও, আর এটা লক্ষ্য করেছে মায়ের চোখ মুখে একটা আনন্দ ঝরে পড়তে ছোটো বেলার বন্ধুদের কথা বলতে গেলে। আজ তো তাদের এতদিন পর সামনে পেল। এই দেখা আর এই স্পর্শের অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় না।ওরা সবাই হৈচৈ করে গাড়িতে উঠল। কথা যেন আর শেষ হয়না। চন্দ্রিল একটা ব্যাপার খেয়াল করলে পুরানো কথা যত ই হোক গভীরে কিন্তু ঢুকছে না কেউ।যাই হোক ওরা বিতান শূচীর নতুন ফ্ল্যাটে এলো। যদিও তন্দ্রা বলেছিলো হোটেলে উঠবে। কিন্তু ওরা তা হতে দেয়নি। চন্দ্রিলের এই প্রথম ভারতে আসা। মায়ের মুখে এতদিন গল্প শুনেছে। খুব ভালো লাগছে মা কে এত খুশি দেখে।ওরা ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেলো। তারপর চন্দ্রিল ওদের জন্য বরাদ্দ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল।ও ভাবে এতটা জার্নির ক্লান্তির পর মা কি করে এখনও গল্প করছে এই অসুস্থ শরীরে!! যাক অনেক দিন পরে দেশে ফিরে মা যে সব ভুলে আছে ভালো লাগছে এটা দেখে। এইসব ভাবতে ভাবতে চোখ জড়িয়ে গেল চন্দ্রিলের।তখনো বিতান, শূচি আর তন্দ্রা ডুব দিয়েছে ওদের অতীতে।তিনজনে এক পাড়াতেই থাকত। এক স্কুলে একই ক্লাসে পড়ত। তন্দ্রার বাবা ইন্জিনিয়ার আর মা ডাক্তার ছিলেন; বিতানের বাবা ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মা গৃহবধূ আর শূচির বাবার একটা ছোটখাটো স্টেশনারী দোকান ছিল আর মা ছিলেন প্রাইমারী টিচার।তিনজনের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান কিন্তু ওদের বন্ধুত্ব সবার কাছে উদাহরণ হয়ে আছে আজও।তন্দ্রা আর বিতান খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল আর শূচি ছিল মধ্য মানের। ওদের মধ্যে কখনও প্রতিযোগিতা ছিল না বরং বলা ভালো পরস্পরের সহযোগিতায় ওরা ভালো রেজাল্ট করত। এইভাবে স্কুল শেষ করে তন্দ্রা গেল মেডিকেল কলেজে, বিতান ইন্জিনিয়ারিং আর শূচি ভূগোল নিয়ে ভর্তি হলো।তন্দ্রার এক দিদি ছিল ওর থেকে বছর তিনের বড়ো। সে কিন্তু পড়াশোনায় অত ভালো ছিল না। কিন্তু অসম্ভব সুন্দর ছিল। তাই একটু অহংকার ছিল। তন্দ্রা যেমন সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারত ওর দিদি চন্দ্রা কিন্তু পারত না। বোনের এই সহজ সরল স্বভাবের জন্য বোনের সঙ্গেও খুব একটা ঘনিষ্ঠভাবে মিশত না।তন্দ্রা তুই কিন্তু সেই আগের মতোই আছিস, বলে শূচি।কেন তোরা ভেবেছিলি কি আমি পাল্টে যাবে! তন্দ্রা বলে উঠলো।তুই যখন লন্ডনে পড়তে চলে গেলি ভেবেছিলাম আর বোধহয় তুই যোগাযোগ রাখবি না। কিন্তু আমরা ভূল ছিলাম তুই সেটা প্রমাণ করে দিলি কিছু দিনের মধ্যে, বিতানের এই কথা শুনে তন্দ্রা বলল তোরাও তো আমার সঙ্গে একই রকম ভাবে আছিস আজ পর্যন্ত।আজ আমি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন তোরা তো আমাকে সাদরে আহ্বান করলি।চল এবার একটু বিশ্রাম করি আর শরীর দিচ্ছে না। বলে তন্দ্রা উঠে চন্দ্রিল যে ঘরে শুয়ে সেই ঘরের দিকে যাচ্ছিল। ওর হাতটা ধরে শূচি বলল আজ থেকে তুই আর আমি একঘরে শোব। কত গল্প জমে আছে বলত।তন্দ্রা একটু ইতস্তত করলেও তা টিকলো না শূচির কাছে অগত্যা ওকে শূচির সাথে ওর ঘরে যেতে হোলো। শূচি ওকে ঠিক করে শোওয়ার ব্যবস্থা করে বাইরে এল। বিতান তখন ব্যালকনিতে গিয়ে বসেছে।তন্দ্রাকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে জানো; ওর মতো একটা এত ভালো মেয়ে কেন যে এত কষ্ট পাচ্ছে কী জানি! ইশ্বরের বিচার নেই।স্কুলের সেই উজ্জ্বল মেয়েটা আজ শরীরের আর মনের কষ্টে একদম ভেঙে পড়েছে কিন্তু বাইরে দেখো এতটুকু প্রকাশ নেই। কথা গুলো বলে শূচি।বিতান বলে আমি সেটাই ভাবছি এতক্ষণ বসে।শোনো ও আমাদের কাছে যতদিন থাকবে ওকে কোনো রকম কষ্ট পেতে দেব না।আর একটা কথা চন্দ্রিল কতটা কী জানে আমর জানিনা তাই সাবধান। তন্দ্রা শুধু বলেছে ও চন্দ্রিলকে সব বলেছে। কিন্তু কতটা কি তো জানিনা তাই বললাম।ঠিক আছে এখন ওঠো একবার বাজার যেতে হবে।দুজনে উঠে পড়ল।~তন্দ্রার ঘুমন্ত মুখটা দেখে শূচির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। ভাবে এতদিন পরে এল অথচ সময় খুব কম ওর হাতে। এই সময়টা ওর সঙ্গে কীভাবে কাটালে ওকে ভরিয়ে তোলা যাবে ভাবতে থাকে ও।শূচির মন চলে যায় সেই ছোটোবেলায়। শূচির মাকে তন্দ্রার মা খুব পছন্দ করতেন। ডাক্তার হলেও সংস্কৃতি জগতের সাথে যোগাযোগ ছিল আর শূচির মা খুব ভালো গান করতেন ও আবৃত্তি ও ভালো করতেন। একটা স্কুল ছিল ওনার যেখানে আশেপাশের ছেলেমেয়েরা গান ও আবৃত্তি শিখতে আসত। তন্দ্রা আর ওর দিদি চন্দ্রাকে ওদের মা সুমেধা আবৃত্তি আর গান শেখার জন্য ভর্তি করে দেয় শূচির মা সঞ্চারীর গানের স্কুলে। সেখানেই প্রথম বিতান আর শূচির সাথে পরিচয় তন্দ্রার। চন্দ্রা খুব ভালো গান গাইত আর তন্দ্রা আবৃত্তি করত। বিতান আর শূচিও গান গাইত। শূচির গলায় যেন মা সরস্বতী সুর ঢেলে দিয়েছেন। পড়াশোনার সাথে সাথে ওদের সংস্কৃতি চর্চাও চলত একসাথে। চন্দ্রা ওদের থেকে বড়ো ছিল ও তাই ওদের সাথে খুব একটা থাকত না।তন্দ্রার আবৃত্তি সবাইকে মুগ্ধ করত। পড়াশোনায় ভালো, দারুন আবৃত্তি করে। সঞ্চারী তন্দ্রাকে খুব ভালোবাসতেন ওর মিষ্টি স্বভাবের জন্য। ওরা একটু একটু করে বড়ো হতে লাগল। প্রাইমারী পেরিয়ে সবাই হাইস্কুলে ভর্তি হলো। ততদিনে তন্দ্রার দিদি ক্লাস এইট। ওরাও ভর্তি হলো এক স্কুলে। তন্দ্রা আর ওর দিদিকে চাইলেই কলকাতার নামকরা স্কুলে পড়াতে পারত ওদের মা বাবা, কিন্তু ওনারা সবসময় চেয়েছিলেন যে ওরা সাধারণভাবে মানুষ হোক।শূচির ভাবনাতে ছেদ পড়ল বিতানের ডাকে। রান্না বান্না হবে না নাকি?হ্যাঁ হ্যাঁ সব হবে। বলে শূচি। আজ বেশি কিছু করব না, ওরা কি খায় দেখি তারপর করছি। এই বলে ও ঘরের অন্যান্য কাজে লেগে গেল।বিতান ওর ল্যাপটপ নিয়ে বসল, চায়ের জন্য হাঁক দিয়ে।ছুটির দিনে খালি চা করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়ি গজগজ করতে করতে চা দিয়ে গেল শূচি।তন্দ্রা উঠে পড়েছে দেখে শূচি ওর খাবার কথা জানতে চাইলে তন্দ্রা বলে দিল তেল মশলা কম দিয়ে যা করে দিবি তাতেই হবে।শূচি জানে তন্দ্রা কি খেতে ভালোবাসে। তন্দ্রা অনেকবার ওদের বাড়িতে খেয়েছে। হ্যাঁরে তোরা এখনও গান করিস? জিজ্ঞাসা করে তন্দ্রা।করি তো মাঝে মাঝে আমাদের যখন আড্ডা হয় তখন। আর তুই? কবিতা?না রে বহু দিন আগে ছেড়ে দিয়েছি।এর মধ্যেই চন্দ্রিল কখন উঠেছে ওরা খেয়াল করেনি-- মা আবৃত্তি করত? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।কেন রে তুই জানিস না! তোর মা অসাধারণ আবৃত্তি করত। শূচি বলে ওঠে।না গো মনি মা কোনো দিন বলেনি। হ্যাঁ, এই ডাকটা তন্দ্রাই শিখিয়েছে।আমি কবিতাই ছেড়ে দিয়েছিলাম তাই তোকে কিছু বলিনি বাবা। আর বলার মতো কোনো সিচুয়েশন তৈরি হয়নি। আজ কথা উঠল তাই জানলি।বেশ বেশ মা ছেলের মান অভিমান পরে হবে। এখন বস এখানে। বলে হাত ধরে বিতান চন্দ্রিলকে ওর পাশে বসায়।তোর মায়ের কথা আমরা বলব তোকে। ও চিরকাল ওরকম নিজের কথা কখনো বলে না। ওর সামনে কেউ ওর প্রশংসা করলে ও বিব্রত হয়, বিতান বলে।আচ্ছা মামু তোমাদের কাছে অনেক কিছু জানার আছে।ওদের নিয়ে বিতান আর শুচি মেতে ওঠে।~দুদিন টানা বিশ্রাম নিয়ে তন্দ্রাকে যেন একটু ফ্রেশ লাগছে বলল শুচি।হ্যাঁ অনেকটাই।তাহলে এবার ওর প্রোগ্রামটা জেনে নিতে হবে। সেই মতো তুমি ছুটি নিও।দেখা যাক,; তবে আমি সব জায়গায় তোমাদের সঙ্গ দিতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। হালিশহরে তুমিই নিয়ে যেও।ওদের এই কথোপকথনের মাঝে তন্দ্রা এসে বলে শোনন আমি আগে চন্দ্রিলকে নিয়ে মেডিকেল কলেজ যাবো। বিতান একটু খোঁজ নিয়ে দেখিস কবে গেলে দেখা পাওয়া যাবে।ওর এই কথা শুনে বিতান আর শুচি পরস্পরের দিকে তাকায়।আমি এখনই জেনে নিচ্ছি কিন্তু তুই ওদের বাড়িতে যাবি না? জিজ্ঞাসা করে বিতান।বাড়িতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? তুই আগে ফোন টা কর তো। যেখানে যেতে বলবে সেখানে যাবো।ঠিক আছে তাই হবে বলে বিতান ফোন করে।হ্যালো অর্ক দা তুমি কি খুব ব্যস্ত? তোমাকে তো সব বলেছিলাম।হ্যাঁ দুদিন হলো এসেছে।ঠিক আছে তাহলে তুমি আগামী কাল এসো। বলে ফোন কেটে দিয়ে বলে তোকে কোথাও যেতে হবে না সে নিজেই আসবে।রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও তন্দ্রা ছটফট করতে থাকে। কিছুতেই ঘুম আসে না। পুরোনো কথা সব উঁকি দেয় মনের জানালা দিয়ে।অর্ক দা ওদের স্কুলের সিনিয়র ওর দিদির বন্ধু। তাই ওদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। কিন্তু কোনো দিন তন্দ্রা সেভাবে দেখেনি। আর সব সিনিয়রদের যেমন দেখতে ওকেও সেইভাবেই দেখতে। প্রথম মনে দোলা লাগে ও তখন ক্লাস নাইন আর অর্ক দা টুয়েলভ। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে তন্দ্রা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আফ্রিকা কবিতা আবৃত্তি করে। অসাধারণ আবৃত্তি শুনে দর্শক আসন বাকরুদ্ধ হয়ে ছিল। সেই দিন যখন অর্ক দা এসে ওর আবৃত্তির প্রশংসা করে তখন তন্দ্রা অনুভব করে ওর মনের কোনে যেন একটা অন্যরকম ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছে।সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় যখন তন্দ্রা ও মেডিকেল কলেজে পড়তে যায়। তিন বছর আগে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে অর্ক ভর্তি হয়েছিলো ঐ কলেজে। তন্দ্রার দিদি তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সপ্তাহান্তে তিনজন একসাথে বাড়ি ফিরত। কিন্তু তন্দ্রা ওর মনের কথা কখনো অর্ক কে জানাতে পারে নি।এইভাবে চলতে থাকে ওদের দিন।এম.এস. করে অর্ক কলকাতার হাসপাতালেই থেকে যায়। তন্দ্রা এম. ডি. চান্স পেয়ে দিল্লি যায় পড়তে।পড়া ছাড়া তন্দ্রা কিছুই জানতো না। মনে মনে অর্ককে ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কথা হয় ঠিকই কিন্তু অপর জনের মনটা বুঝে উঠতে পারে না। দিদির হাবভাব দেখলে ওর মনে হয় যে অর্কদাকে বিশেষ চোখে দেখে তাই ওর বলা হয়না। আবার কখনো মনে হয় যে না অর্ক যেন তন্দ্রার প্রতি একটু দুর্বল। এই দোলাচলে কাটতে থাকে দিন~তন্দ্রার এম. ডি র পরীক্ষা হয়ে গেছে, কিছু কাজ থাকায় ও দিল্লি থেকে যায়। এবার ওর স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপ। ও বরাবর অঙ্কলজিস্ট হতে চেয়েছে। সেই কারণে এবার ওর বিদেশ যাত্রা। সব মোটামুটি হয়ে গেছে। রেজাল্ট টা বেরিয়ে গেলেই চলে যাবে। এমন সময় একটা সেমিনারে অর্ক র সাথে দেখা হয় ;তন্দ্রাও সেখানে ওর একজন প্রফেসরের সাথে গেছিল। ওই প্রফেসর তন্দ্রাকে খুব ভরসা করেন। অর্ক কে দেখে তন্দ্রা অবাক হয়। কিন্তু এটাও ভাবে ওকে তো এই আসার ব্যপারে কিছু জানায়নি। অর্ক ফোনে প্রায়ই কথা বলে যদিও বেশির ভাগ প্রফেশনাল কথা। তবুও একটু অবাক হয়। জানতে পারে হঠাৎই আসতে হয়েছে আর ওর এক পুরোনো বন্ধুর বাড়িতে উঠেছে।দুদিন সেমিনারে তন্দ্রা ওর সিনিয়র প্রফেসরের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটায়, অর্কর সাথে খুব বেশি কথা হয়না। সেমিনার শেষে হঠাৎ তন্দ্রাকে ডেকে অর্ক বলেতুই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি বন্ধুর গাড়ি নিয়ে আসছি একবার বেরোবো তোর সাথে কিছু কথা আছে। তন্দ্রা অবাকই হয় একথা শুনে, কিন্তু কিছু বলার আগেই অর্ক চলে যায়। এরপর যথারীতি ওরা বেরিয়ে পড়ে। অনেক দুর চলে যায় দুজনে । একটা রোড সাইড ধাবায় বসে খেতে আর এটা সেটা কথা বলতে বলতে রাত গড়িয়ে যায় খেয়াল করে না দুজনের কেউ। অথচ কি যে বলবে অর্ক সেটাও বোঝেনা তন্দ্রা। এরমধ্যে মেঘ জমে আকাশে। বৃষ্টি আর সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। উপায় না পেয়ে ওই ধাবাতেই রাত কাটাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেখানেই শুরু হয় সমস্যা। ওই ধাবাতে সেই ভাবে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই ; একটা রেস্ট রুম আছে শুধু। অগত্যা উপায় না পেয়ে সেখানেই রাতটা কোনো রকমে কাটানোর কথা ভাবে। অনন্যোপায় হয়ে রাজী হতে হয় তন্দ্রাকে। আর সেখানেই ঘটে যায় সেই ঘটনা যা ওর জীবনের অনেক কিছু পাল্টে দিয়েছে। ওই ঝড়ের রাতে ওরা পরস্পরের মনের কথা বলে। পরস্পরের ভালোবাসা বিনিময়ের প্রমাণ নিজের অজান্তেই তন্দ্রাকে দিয়ে দেয় অর্ক। যদিও তন্দ্রাও সেদিন ভাবেনি কি ঘটে গেল।নিজেদের এতদিন ধরে রাখা আবেগের যেন বাঁধ ভেঙে গেছিল সেদিন। সম্বিত ফিরল পরদিন সকালে। তবুও তন্দ্রা বলতে পারেনি ওর বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা। যদিও অর্ক জানত কিছুটা। তবুও সঠিক ভাবে কিছু জানত না; তন্দ্রা যে সেই কারণে দিল্লিতে রয়েছে সেটা জানত না। অর্ক জানত যে তন্দ্রা বিদেশে যেতে চায় কিন্তু এটা জানত না যে এখনই যাবে।দিন পনের পর তন্দ্রা বাড়ি গেল সুখবর নিয়ে মা বাবার সঙ্গে দেখা করতে। এই খবরে ওর মা তো ভীষণ খুশি, বাবাও। খবরটা সামনসামনি দেবে বলে অর্কদের বাড়ি গেল, অর্ক সেদিন বাড়িতে এসেছিল। ওদের বাড়িতে আগেও অনেকবার গেছে। কিন্তু এবার একটা অন্য মন অন্য একটা ভাবনা নিয়ে গেল। অর্ক ঘরে ছিল বলে ওর মা ওকে ঘরেই যেতে বললেন এও বললেন যে যা তোর দিদি ও আছে।ঘরে ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল তন্দ্রা, একি দিদি অর্ককে জড়িয়ে ধরে আছে! অর্ক দিদির কথা শুনে কি বলছে! এসব কথা বলিস না! একথার মানে কী?অর্কর মনে কী আছে তাহলে? যেটা ঘটেছে সেটা কি নেহাত একরাতের দুর্ঘটনা? না আর কিছু ভাবতে পারে না তন্দ্রা। বেড়িয়ে চলে আসে ওখান থেকে একটা জরুরি কল এসেছে বলে অর্কর মাকে।তন্দ্রা ভাবে কি করবে ও? দিদি কে পথ ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে? নাকি অর্কর সামনে জিজ্ঞাসা করবে ও কি চায়?না কিছুই জানার দরকার নেই, যেমন ছিলাম তেমনই ভালো থাকবে ভেবে তন্দ্রা অর্কর সাথে কোনো ভাবে দেখা না করে চলে যায়। অর্ক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে তন্দ্রা ওর মাকে ওর আর অর্কর ব্যাপারে একটু আভাস দিয়েছিল।তন্দ্রার মনে যে আশঙ্কা ছিল সেটা সত্যি হলো ও ওখানে যাওয়ার দুমাসের মধ্যেই টের পেল ও ওর ভালোবাসার উপহার নিয়ে এসেছে নিজের শরীরের মধ্যে। এর মধ্যে আরও অনেক খবর এলো।কেউ কিছু জানতে পারেনি তন্দ্রার কথা। একমাত্র শুচি আর বিতান জানত।এরপর ও পাঁচ বছর দেশে আসেনি। ততদিনে চন্দ্রিল বছর চারেকের হয়ে গেছে। একটা কাজে এসেছিল কলকাতা চন্দ্রিল কে ওর বাড়িওয়ালার কাছে রেখে। মা বাবার সাথে দেখা করেছিল। মা বিয়ের কথা বললে ওর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফিরে গেছিলো।যোগাযোগ নামমাত্র ছিল মা বাবার সাথে।আর শুচি ও বিতানের সাথে সব সময় যোগাযোগ ছিল।বেশ চলে যাচ্ছিল মা ছেলের জীবন। কিন্তু এই মারন রোগ আবার ফিরিয়ে নিয়ে এল ওকে অতীতের কাছে। একটা দ্বিধা থাকলেও ও চায় একবার চন্দ্রিলের কথাটা সামনাসামনি বলতে। আর ও চন্দ্রিল কেও কথা দিয়েছে একবার ওর বাবাকে দেখাবে।। তারপর চন্দ্রিল কে নিয়ে ফিরে যাবে ওদেশে। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।শ্রীমতি রাখি রায়বর্ধমানক্রমশঃ ...

এপ্রিল ১৭, ২০২২
নিবন্ধ

আজ প্যালিন্ড্রোম (Palindrome) দিবস, কি এই প্যালিন্ড্রোম?

ফেব্রুয়ারী মাস শুরু হয়ে থেকেই টেরি, গোলাপ, হাগ, ভালোবাসা সহ নানা দিবস পালনের হিরিক চলছে, এবার এসে পড়ল প্যালিনড্রোম দিবস। নেটনাগরিক বৃন্দ সামাজিক মাধ্যমে আজ সকাল থেকেই মেতে উঠেছেন প্যালিনড্রোম দিবস পালনে। এই সম্পর্কিত বহু পোস্ট ঘুড়ে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, অনেকেই টুইট করছেন প্যালিনড্রোম তারিখ বলে। আসুন জেনে নিই কি এই প্যালিনড্রোম?Today is 2s day and it falls on tuesday(the second day of the week)22.02.2022It is a palindrome and an ambigram, it can be read from left to right and right to left, upside down..#palindrome #palindromeday #February2022 pic.twitter.com/kaCoe7Iyh8 Harshavardhan (@Harshav69180828) February 22, 2022প্যালিন্ড্রোম হল একটি শব্দ, সংখ্যা, বাক্যাংশ বা অক্ষরের অন্যান্য ক্রম যা সামনের দিক থেকেও যা পড়ছেন, পিছনের দিক থেকেও একই। সহজ উদাহরণ কাকা, বাবা। বাংলা ভাষায় একে দ্বিমুখী শব্দ বা সংখ্যা বলা যায়। এধরনের দ্বিমুখী শব্দ বা বাক্য সাজাতে যাঁরা দক্ষ তাঁদের পেলিনড্রোমিস্ট বলা হয়ে থাকে। প্যালিনড্রোমিক লেখা প্রাচীন কিরাতার্জুনীয় কাব্যের বহু অনুচ্ছেদে দেখা যায়। এছাড়াও সংখ্যাসূচক প্যালিনড্রোম রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ছোট সংখ্যা 11/11/11 11:11 এবং দীর্ঘ সংখ্যা 02/02/2020 ব্যবহার করে তারিখ বা সময় লেখা হয়। দীর্ঘ বাক্যে প্যালিন্ড্রোমগুলির ছোট অক্ষর ও বড় অক্ষর, যতি চিহ্ন এবং শব্দের দৈর্ঘ উপেক্ষা করা হয়ে থাকে। আজকের দিনটি হল প্যালিনড্রোম ডে, 22-02-2022 . দু দিক থেকেই একই। যেমন নিধুরাম রাধুনি, সুবললাল বসু, রমাকান্ত কামার যেদিক দিয়েই পড়ুন একই।22.02.2022The Special Date today is both a #Palindrome and an #Ambigram !The Date will read the same from left to right , from right to left and Upside down .Interesting 👏🏻 Sonal Goel IAS (@sonalgoelias) February 22, 2022বাংলায় প্যালিন্ড্রোম বা উভমুখীসম শব্দ তৈরির অগ্রদূত ছিলেন দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। দাদাঠাকুরই প্রথম বাঙালি যিনি বাংলায় প্যালিনড্রোম নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর জন্মসাল ১৮৮১৷ ১৮৮১ কিন্তু একটা প্যালিনড্রোমিক বছর। আর কাকতালীয়ভাবে জন্ম তারিখ বাংলায় ১২৮৮ বঙ্গাব্দের ১৩ বৈশাখ। ১৩ বৈশাখ সংখ্যায় লিখলে ১৩/১ এইভাবে লেখা হয়, এটাও একটা প্যালিনড্রোম সংখ্যা। আর দাদাঠাকুরের প্রয়াণ ও জন্ম দিন একই তারিখ ১৩ বৈশাখ। জীবন শুরু যে তারিখ দিয়ে, মৃত্যুও সেই তারিখে। দাদাঠাকুরের জীবনচক্র একটা প্যালিনড্রোম! তিনি তাঁর বিদুষক পত্রিকায় বহু প্যালিনড্রোম সৃষ্টি করে বাংলাভাষায় প্যালিনড্রোমকে দারুনভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। কাক কাঁদে কাক কাঁ, চেনা সে ছেলে বলেছে সে নাচে, তাল বনে নেব লতা, মার কথা থাক রমা, রমা তো মামা তোমার, চার সের চা, বেনে তেল সলতে নেবে, ক্ষীর রস সর রক্ষী, কেবল ভুল বকে, দাস কোথা থাকো সদা?, নিমাই খসে সেখ ইমানি, থাক রবি কবির কথা, বিরহে রাধা নয়ন ধারা হেরবি সহ অসংখ্য অমর প্যালিন্ড্রোম তিনি সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর সৃর্ষ্টি কীর্তন মঞ্চ পরে পঞ্চম নর্তকী এই শব্দবন্ধটি এখনও বাংলাভাষায় সর্বাধিক জটিল ও সর্বাধিক শব্দ সমন্বিত প্যালিনড্রোম।

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২
নিবন্ধ

পুনর্মিলন (ছোট গল্প)

ভোর থেকে অন্তরাদের বাড়িতে হৈ হৈ কান্ড। আজ সরস্বতী পূজো। ওদের বাড়িতে বরাবর খুব বড় করে পূজো হয়। ওর দাদু খুব নাম করা সাহিত্যিক ও অধ্যাপক প্রিয়ব্রত সরকার। বাড়িতে পূজো উপলক্ষে অনেক নাম করা লোকজন আসেন। আসে ওনার ছাত্র ছাত্রীরা। বাড়ি গমগম করে। আজ আবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে অন্তরার বিয়ের পাকা দেখা। পাত্র পক্ষের তরফ থেকে আজকের দিনের কথা বলা হয়েছে। অন্তরা প্রিয়ব্রত বাবুর একমাত্র নাতনী। ওনার ছোটো ছেলে দেবব্রত সরকারের একমাত্র মেয়ে। একটা পথ দুর্ঘটনায় দেবব্রত আর ওনার স্ত্রী মেয়েকে একা করে দিয়ে চলে গেল। তখন অন্তরার তখন চার। তারপর প্রিয়ব্রত বাবু আর ওনার স্ত্রী বুকে করে ওকে মানুষ করেন। সকাল থেকে অন্তরা আর ওর ছোটো বৌদি ইপ্সিতা পূজোর জোগাড় করতে ব্যস্ত। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খুব মধুর, যেন দুই বন্ধু। ইপ্সিতা লক্ষ্য করে অন্তরা যেন কয়েকদিন একটু অন্যমনস্ক রয়েছে; আজ তো আবার দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুমায়নি।কাজ করতে করতেই বলে কদিন ধরে লক্ষ্য করছি তুই একটু যেন চাপে আছিস! কী হয়েছে? এই বিয়েতে কি তোর মত নেই? তাহলে দাদুকে বলে দে। নারে বৌমনি ঠিক বিয়ের জন্য নয় আমি চাপে আছি অন্য একটা কারনে। কি কারণে? দ্যাখ বিয়েটা যে আমি খুব খুশি হয়ে করছি তা নয়। তবে আমার চাপের কারণ অন্য। কয়েক দিন যাবৎ একজন খুব জ্বালাচ্ছে ফোনে। মানে! কীভাবে? কল করে? না না কল নয়। তাহলে? কিছু মেসেজ যেগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারছি না, খুলে বল। বলবো, তোকে ছাড়া কাকে বলে বলবো; এখন কাজগুলো চটপট সেরে নিই তারপর উপরে গিয়ে সব বলছি। ঠিক আছে তাই হবে। যদি কিছু করতে পারি। এরপর দুজনে কাজে মন দেয়। প্রিয়ব্রত বাবু সরস্বতী পূজোর ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। উনি সবসময় বলেন দিদিভাই আমাদের তো দেবী সরস্বতীর দয়াতেই সব তাই দেবীর আরাধনা খুব যত্ন করে, নিষ্ঠার সাথে করতে হবে। অন্তরা সেই ছোটো থেকে দাদু ও ঠাম্মার সাথে ঠাকুরের কাজ করতে করতে সব শিখে নিয়েছে। এখন ঠাম্মা নেই; বছর তিন আগে চলে গেছে তারাদের দেশে। এখন অন্তরার দোসর ইপ্সিতা, ওর জ্যাঠতুতো দাদা শুভমের বৌ। প্রিয়ব্রত বাবুর বড়ো ছেলে ঋতব্রত সরকার পেশায় উকিল। তার দুই ছেলে প্রীতম বড়ো আর শুভম ছোট। বড়ো বাবার মতো উকিল আর ছোট দাদুর পথ বেছে নিয়েছে। ওর স্ত্রী শিক্ষিকা। বড়ো ছেলে স্থানীয় এক বড়ো লোক ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ির কাছেই থাকে। মাঝে মধ্যে আসে বাড়িতে তবে বড়ো বৌ এর সাথে ছোট জা বা ননদের তেমন ভাব নেই। বড়ো লোকের মেয়ে বলে একটু নাক উঁচু। পূজোর জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছে সে। তবে কোনো কাজে সে নেই। তাছাড়া বড়ো দাদা হিসেবে প্রীতম কে থাকতে বলেছেন দাদু। কোনো একটা কারণে দাদু নাতির মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই আছে সেটা বোঝে অন্তরা, কিন্তু জানেনা সঠিক ভাবে। দাদু কে ও খুব ভালোবাসে শুধু নয় শ্রদ্ধা ও করে খুব। দাদু কে এই সরস্বতী পূজার সময় অন্তরার মনে হয় ছোটো বাচ্চা। ওরা সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে বাকি দায়িত্ব ছাত্র ছাত্রীদের দিয়ে উপরে চলে যায়। উপরে গিয়েই ইপ্সিতা অন্তরাকে বলে আগে বল কি ব্যাপার? তুই তো জিৎ এর কথা জানিস, আমার বন্ধু আবীরের পিসির ছেলে। আবীরের দিদির বিয়েতে পরিচয় হয়েছিল। হ্যাঁ বলেছিলি যে তোকে ওর পছন্দ ছিল। বেশি কিছু না। হ্যাঁ তোকে তখন ওটুকুই তোকে বলেছিলাম। আসলে বলতে ইচ্ছা করেনি। কিন্তু আজ তোকে সবটুকু না বললে হবে না। বেশ সে বলবি; কিন্তু ওর কথা আসছে কেন হঠাৎ! ও তো কবেই হারিয়ে গেছে ,ইপ্সিতা বলে। তুই তো বলেছিলি ও ধুমকেতুর মতো এসেছিল আবার হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে সেইভাবেই। একদমই তাই। এরকমই এক সরস্বতী পূজোর দিন সে আমাকে প্রপোজ করে, আমাদের কলেজের সরস্বতী পূজার প্রোগ্রামে গান গাইতে গেছিলাম, আবীরের সাথে ও এসেছিল। প্রোগ্রাম শেষে সেদিন আমাকে ও প্রোপোজ করে। আমি সেদিন কোনো কথাই বলতে পারিনি, শুধু ফোন নম্বর আদানপ্রদান হয় মাত্র। ও তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। তারপর ফোনে কথা হতো, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন রকম কবিতা, গল্প, জ্ঞানীগুণী মানুষের উক্তি পাঠানো ছিল ওর রোজকার অভ্যাস। ওর মধ্যে কোনোদিন কোনো খারাপ কিছু পাইনি। তাই বেশ ভালো লাগতো কথা বলতে। আমরা দেখা করেছি মাত্র দু চারবার । এইভাবেই বেশ চলছিল ; কিন্তু কি যে হলো কি জানি! একবছর পর আবার সেই সরস্বতী পূজোর সময়, পূজোর পরেরদিন একটা কফি শপে যাই দেখা করতে। অনেকটা সময় কাটাই ,দুজনের জীবনের স্বপ্ন ইচ্ছা এসব নিয়ে আলোচনা হয়; পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিই পরস্পরকে। তারপর একটা সময় যে যার মত নিজের নিজের জায়গায় ফিরে যাই। সেদিন থেকেই শুরু হয় ছন্দ পতন। ফোন বন্ধ, কোনো মেসেজের উত্তর নেই, কল নেই। তারপর হঠাৎ একদিন মেসেজ করে যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে অপেক্ষা করো আমি আবার ফিরে আসবো। ব্যস আর কোন সাড়া শব্দ নেই তারপর থেকে। আবীরের কাছেও কোনো খবর পাই না। প্রায় ছ বছর হতে চলল। তারপর কত কিছুই তো ঘটে গেছে সব তুই জানিস, শুনেছি ছোড়দার কাছ থেকে। আমার বিয়ে নিয়ে বড়দা আর জ্যেঠুর সাথে দাদু ভাই এর অশান্তি। তখন যদি ছোড়দা দাদু ভাই এর পাশে না থাকতো তাহলে কি যে হতো শেষ পর্যন্ত জানিনা। সব কিছু সামলে দাদু ভাই আর ছোড়দার সাহায্যে আজ আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। তার সাথে মনের মধ্যে একটা আশা ছিল তাই অপেক্ষাও করেছি। কিন্তু দাদু ভাই বিয়ের কথা বলায় এবার আর আমি কিছু বলতে পারিনি। কারন আমার কাছে আর কোনো অজুহাত নেই। আর সমস্যা শুরু সেই দিন থেকে। আবার আমার ফোনে সেইসব মেসেজ যে রকম জিৎ পাঠাতো। কাল রাতে তো আবার আমি কাল আসছি এই মেসেজ পাঠায় এই দ্যাখ বলে ফোনটা দেখায় ইপ্সিতাকে। এখন বোঝ আমি কি অবস্থায় আছি। একদিকে দাদু ভাই এর অতিথিরা আসছে এখন যদি আমি না বলি তাহলে দাদু ভাই এর সম্মানহানি হবে আবার অন্য দিকে আমার ভালোবাসাকে অস্বীকার করা হবে দাদু ভাই এর সাথে সহমত হলে। আমি কি করি এখন তুই আমাকে বলে দে বৌমনি বলে অন্তরা ইপ্সিতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ইপ্সিতা ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। বলে আজকের দিনটা দাদুর অতিথিদের সামনে চল । তারপর তোর দাদার সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়। দুজন এরপর ঠিকঠাক হয়ে নেমে আসে। ওদের দেখে প্রিয়ব্রত বাবু বলেন এই তো আমার দুই জীবন্ত সরস্বতী এসে আমার উৎসবের প্রান সঞ্চার করলো। পূজো হলো, ভোগ বিতরণ পর্ব শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। এরপর বিকেলের সেই বিশেষ পর্ব। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রীতম আর ওর স্ত্রী সঞ্চারী থেকে গেল। দাদুর কথায় সঞ্চারী অন্তরার ঘরে গেল দেখতে ও তৈরি হয়েছে কিনা দেখতে। অন্তরা তখনও বসে আছে হাতে ফোন নিয়ে। মুখে চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। যদিও সঞ্চারীর চোখে সেসব পরে না। ঘরের ভিতর গিয়ে বলে কিরে এখনও তৈরি হোস নি? ওরা এলো বলে তাই দাদুর কথায় দেখতে এলাম। কেন যে তখন তোর বড়দার কথায় রাজি হলি না! আজ তাহলে কোথায় থাকতিস। অন্তরা এসব কথায় বিরক্ত হয় ও বলে তুমি গিয়ে দাদুকে বলো আমি যাচ্ছি। এখন আর এসব ভালো লাগছে না। অন্তরার কথায় সঞ্চারী রাগ করে। বলে ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। দাদুর কথায় এসেছিলাম। আমার কি দরকার তোর ঘরে আসার। সঞ্চারী বেরিয়ে যেতেই ইপ্সিতা ঘরে ঢোকে। দিদি ভাই কি বলতে এসেছিল রে? জিজ্ঞাসা করে। দাদুর কথায় দেখতে এসে ছিল আমি তৈরি হয়েছি কিনা। আর এসে সেই পুরোনো কাসুন্দি। তুই বা এখনো তৈরি হোস নি কেন? কি করে হবো! এই দ্যাখ বলে ফোনটি দেখায় মেসেজ আমি আসছি। এবার ইপ্সিতা ও একটু যেন ঘাবড়ে যায়। কি হবে এবার? আমার এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে। তুই যে কি বলিস অন্তু?? একদম আজেবাজে বকবিনা।। এখন এগুলো পড়ে তৈরি হয়ে নে। এই বলে একটা ঢাকাই শাড়ি আর কিছু হালকা গয়না দেয়। বেশ শাড়িটা পড়ছি কিন্তু গয়না পড়েন না। আবার ওরকম করে! এনেছি তোর জন্য পড় না সোনা বলে ইপ্সিতা অন্তরার গাল ধরে আদর করে দেয়। ধুর তুই ও বুঝতে পারছিস না বৌমনি! সব বুঝতে পারছি কিন্তু এই মূহুর্তে কিছু করার নেই। ওনারা এসে গেছেন। দাদু তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। এরপর আর কিছু বলার থাকে না অন্তরার। ও তৈরি হয়ে ইপ্সিতার সাথে নিচে যায়। নীচে বসার ঘরে সবাই বসে আছে দাদু, জ্যেঠু, দাদারা বসে আছেন অতিথিদের সাথে। অন্তরা আসলে দাদু উঠে এসে ওকে সবার সামনে নিয়ে এসে বলেন দেখো তো দিদি ভাই আমার পছন্দ করা পাত্র কে তোমার মনে ধরে কিনা? তোমার পছন্দ হলে তবেই আমি কথা এগিয়ে নিয়ে যাবে। যে দিন থেকে বিয়ের কথা বলেছি সেদিন থেকেই তোমার মুখে আষাঢ় মাসের মত মেঘের ঘনঘটা দেখছি। অন্ত লজ্জা পায়। তখন ওর ছোড়দা শুভম বলে ওঠে ঠিক বলেছো দাদু মনে হচ্ছে ওকে আমরা দ্বীপান্তর করে দেব। বলে হাসতে থাকে শুভম। আর একটা হাসির আওয়াজ কানে যেতেই চমকে ওঠে অন্তরা। এ কাকে দেখছে! ওর অবস্থা দেখে দাদু মুচকি হাসে। অন্তরার অবস্থা দেখে দাদু বলে ওঠেন কি হল দিদি ভাই পাত্র কি তোমার পছন্দ হয়নি? তাহলে এখনই বলো আমি নাকোচ করে দিই। দাদুর কথায় সম্বিত ফিরে পায় অন্তরা। ও মাথা নামিয়ে নেয়। ওর চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। দাদু বোঝেন তাই ইপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বলেন নাতবৌমা যাও তো ওদের দুজনকে উপরে নিয়ে যাও। ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিক। অন্তরা একথা শুনে স্বস্তি পায়। ওর তো তখন মূর্ছা যাওয়ার মতো অবস্থা। সত্যি না স্বপ্ন সেটাই ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না। দাদুর কথা শুনে বাকিরা মুচকি হাসেন। অন্তরা সেদিকে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে উপরে ওর ঘরে চলে যায়। ও বুঝতে পারছে না কি ঘটছে! এটা কি করে সম্ভব? দাদু ওকে কোথায় পেলো? সত্যি কি ও দাদুর ছাত্রের ছেলে? এরকম অনেক প্রশ্ন অন্তরার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে, এমন সময় কী খুব অবাক হয়েছো তো? আমি কি বলেছিলাম ? আমি ঠিক ফিরে আসব। এসেছি তো ফিরে। হ্যাঁ এভাবে আসবো এটা তুমি ভাবতে পারোনি। কিন্তু আমি আমার বলা সময়ের মধ্যেই ফিরে এসেছিলেন। অবাক হয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে অন্তরা। আজ ওর ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ মন হাজার প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কি দেখছো? কিছু বলো। আজকের এই দিনটার জন্য অনেক কষ্ট করেছি, অনেক অপেক্ষা করেছি। বলে শত্রুজিৎ। অন্তরা কিছু বলতে পারেনা। আজ চোখের জলে ওর বুক ভেসে যাচ্ছে। এমন সময় দাদু আসেন আজকের এইদিনটির জন্য আমিও অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু দিদি ভাই তোমার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে। এবার দাদুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় অন্তরা। দাদু বলেন আমি জানতাম আমিই তোমার জীবনের সব থেকে বড় বন্ধু অথচ তুমি আমাকেই কিছু জানানো। এবার কথা বলে অন্তরা আমি কি বলতাম তোমাকে? আমি নিজেই যে কিছু বুঝতে পারিনি। দাদু বলেন ঠিক আছে বোঝার জন্য সময় দেওয়া হবে এখন চলো আমরা আশীর্বাদটা সেরে নিই। আশীর্বাদ পর্বের শেষে অন্তরা আর জিৎ কে একা ছেড়ে দিয়ে সবাই নিচে যায় জলযোগের ব্যবস্থা করতে। ওরা দুজন হঠাৎ এভাবে কাছাকাছি এসে কথা খুঁজে পায়না। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর অন্তরা বলে ওঠে কি করে কি হলো আমাকে একটু পরিস্কার করে বলবে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সব বলবো বলেন তো এসেছি। বলে শত্রুজিৎ হাত ধরে অন্তরাকে পাশে বসায়। তারপর বলে আমাকে ক্ষমা করো এছাড়া আমার উপায় ছিল না। ঘটনার শুরু যেদিন আমাদের শেষ দেখা হয় সেদিন থেকেই। আমাদের একসাথে দেখে তোমার বড়দা। তুমি গাড়িতে উঠে যাওয়ার পরে ওনারা মানে তোমার বড়দা আর বৌদি আমাকে অনেক কথা বলেন। সেসব আজ আর তোমাকে শুনতে হবে না। তবে আমি সেদিন এটি বুঝতে পারি তোমার সব স্বপ্ন আশা শেষ হতে চলেছে। যে স্বপ্নের কথা তুমি তার কিছু আগেই আমাকে বললে সেসব নষ্ট হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় আমি আবীরের কাছ থেকে তোমার দাদুকে ফোন করি এবং সবটা ওনাকে জানাই। একটা কথা বলি তোমার দাদা বৌদি আমাকে বলেছিলেন তোমার সাথে যোগাযোগ রাখলে ওনারা তোমার ক্ষতি করে দেবেন। আমি দাদুকে সব জানাই। উনিই তখন আমাকে পরামর্শ দেন যে আমি যেন তোমার সাথে আপাততঃ যোগাযোগ না রাখি। দুজন দুজনের স্বপ্ন গুলো সফল করার জন্য সময় দিই। এটা আমাদের আর একটা পরীক্ষা ছিল আমরা সত্যিই ভালোবেসে ছিলাম কিনা। যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের জীবনে অন্য কারো প্রবেশ ঘটত তাহলে বুঝতে হতো আমরা ভালোবাসি নিয়ে পরস্পরকে। তাছাড়া তোমার রেজাল্ট সেবছর খুব খারাপ হয়ে ছিল। দাদুর মনে যে প্রশ্ন ছিল আমার সাথে কথা বলার পর তা উনি পরিস্কার বুঝতে পারেন তোমার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারনে। তোমাকে খুব ভালো জানতেন তাই বলেন ওকে আঘাত না দিলে ও নিজেকে তৈরি করতে পারবে না। নিজেদের তৈরি করে তবেই আবার আমাদের দেখা হবে। এটাই ছিল দাদুর শর্ত। তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল দাদুর উপর তবু মেনে নিয়েছিলাম একটা শর্তে দাদু যেন তোমার পাশে সবসময় থাকেন আর তোমার স্বপ্ন সফল করতে সাহায্য করেন। আজ দেখো আমরা নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছি। আজ মনে হচ্ছে দাদু যদি সেদিন ওটা না করতেন তাহলে আজকের এই আনন্দের দিন টা আসত না। অন্তরা স্তব্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে জিৎ এর কথা। আর ভাবছ কত কিছুই না ঘটে গেছে এ কবছরে অথচ ও কিছুই জানেনা। জিৎ বলে দাদুর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আজ ওনার পরামর্শ শুনেছিলাম বলে জীবনে সফল হতে পেরেছি। আর দেখো আজও সেই সরস্বতী পূজোর দিন। এইদিন আমাদের বিচ্ছেদ ঘটে ছিল আবার আজ সরস্বতী পূজোর দিনেই আমাদের পুনর্মিলন হলো। আমরা সত্যিই মা সরস্বতীর আশীর্বাদ ধন্য। চলো এবার নীচে গিয়ে দাদুকে প্রনাম করি।

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২
নিবন্ধ

উপলব্ধি (Perception)

সকাল থেকে কেয়া খুব ব্যস্ত। অফিসে আজ একটা প্রেসেন্টেশন আছে একটু তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। এখনো মালতি দি এলো না সকাল আট টা বাজলো। একটু চিন্তাই হচ্ছে ওর। আজ সৌমাল্য নেই যে ওকে বলবে একটু পরে বেরোতে মেয়েটা কে স্কুল থেকে আনতে হবে। মেয়েকে সকালে স্কুলে পাঠিয়েছে কিন্তু মালতী দি না আসলে আনবে কে? এসব চিন্তা করতে করতে নিজের ব্যাগ টিফিন সব গুছিয়ে রাখ্ছে এমন সময় বেল বাজলো।যাক বাবা শেষ পর্যন্ত এসেছে। দরজা খুলে মালতী ঢুকতেই কেয়া একটু জোরেই বলে উঠলো এতো দেরি করলে কেনো ?তোমাকে তো কাল কতবার করে বলেদিলাম তাড়াতাড়ি আসতে।মালতী মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল কাল রাত থেকে ছেলেটার খুব জ্বর । তাই দেরি হয়ে গেল।কেয়া আর কিছু বলল না। নিজে তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেল।মালতী কাজে লেগে পরলো । মিষ্টি এসে খাবে, ওর খাবার তৈরি করতে হবে। রাতের রান্না করে বারি যায় ,তাই সেটাও রেডি করে রাখতে হবে। আজ আবার দাদা ফিরবে। এসবের মাঝে মনটা ছেলেটার জন্য উদাস হয়ে যাচ্ছে।মিষ্টি কে আনার সময় হয়ে গেছে মালতী বেরিয়ে পরলো । মিষ্টিকে এনে স্নান করিয়ে খাইয়ে ঘুম পারাবে মিষ্টি তখন জিজ্ঞাসা করলো--ও মালু পিসি তোমার কি হয়েছে? আজ তুমি কথা বলছো না কেনো? তোমাকে মা বকেছে?মালতী মিষ্টি কে বুকে টেনে নেয়। না সোনা মা বকেনি। আসলে আমার বাড়িতে যে দাদাটি আছে তার খুব শরীর খারাপ তাই আমি তার কথা ভাবছিলাম।তুমি চুপ করে ঘুমিয়ে পর । সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে নাহলে ঘুমিয়ে পড়বে। মা বকবে তখন।মিষ্টি ঘুমিয়ে পরে।এরপর মালতী বিকেলের কাজ সারতে থাকে। যদি তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারে।কাজ করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে এলো ঠিক সেই সময় দাদা মানে মিষ্টির বাবা বাড়ি ফিরলেন। সৌমাল্য অফিসের কাজে বাইরে গেছিল কদিনের জন্য।মালতী দাদাকে চা দিয়ে মিষ্টিকে খাইয়ে রেডি করে দিল। ওকে পড়াতে আসবে।মালতী কাজ করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে বারবার । সব কাজ হয়ে গেল সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেলো কিন্তু বৌদি আসেনি তাই ও বাড়িতে যেতে পারছে না।শেষে দাদাকে বলে বাড়ি চলে গেল।কেয়া বাড়ি ফিরল রাত তখন নটা। ক্লান্ত শরীর, ফ্রেশ হয়ে বসে সৌমাল্যর অফিসের কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেল। মিষ্টি খেতে খেতে বলল , আচ্ছা মামমাম আমার শরীর খারাপ হলে তুমি অফিস যাবে?কেনো সোনা? তুমি একথা কেনো বলছো?বোলোনা মাম মাম ।তখন কেয়া কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। মেয়েটা হটাত একথা কেনো বলছে? কেয়া বলল না সোনা আমি অফিস যাব না।তাহলে মালু পিসি কেনো আসবে মাম মাম?মালু পিসির ছেলের তো খুব জ্বর । সারাদিন মালুপিসির সারাদিন মন খারাপ করছিল।মেয়ের কথা শুনে কেয়া অবাক হলো,এইটুকু মেয়ে যেটা বুঝল আমরা বুঝতে পারলাম না।ওদের মা মেয়ের কথার মাঝে বাবা এসে হাজির হলো।ঠিক আছে মামমাম কাল মালু পিসিকে আসতে বারণ করে দেবো। আর আমরা গিয়ে মালু পিসির ছেলেকে দেখে আসবো।আমিও কাল অফিস যাব না।ওরা বুঝল সত্যি স্বার্থের কারণে ওরা চোখে দেখ্তে পায়নি যেটা সেটা ওইটুকু মেয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।শিশুরাই বলতে পারেরাজা তোর কাপড় কোথা?এই উপলব্ধি বড়োদের স্বার্থের দুনিয়ায় নেই।রাখি রায়-র কলমে আরও কিছু লেখাআরও পড়ুনঃ দাগ (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ কুঁড়ে ঘর থেকে ক্রিকেটের নন্দনকাননেআরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিসআরও পড়ুনঃ উত্তরণ (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাতআরও পড়ুনঃ মিঠির ডায়েরি (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)

জানুয়ারি ৩০, ২০২২
নিবন্ধ

আত্মপ্রকাশ - ছোটো গল্প

আজকের এই সংবর্ধনায় আমি আপ্লুত, তোমরা সকলে আমার সন্তান তুল্য। আজ তোমাদের একটা কথাই বলবো -- কোনো বিষয় কম গুরুত্বপুর্ণ নয়, যে বিষয় ভালো লাগবে সেটা ভালোবেসে পরলেই তার গভীরে ঢোকা যায়; পাওয়া যায় অমৃতের সন্ধান। -- ঐতিহাসিক ও ইতিহাসের লেখক সৌমেন বসু রায় ছলছল চোখে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এই কথা গুলি বলে শেষ করলেন তার বক্তব্য।হলের সামনের সারিতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বসে আছেন তার দাদা আর বৌদি।আর এসবের উদ্ক্তা তার ভাইপো কুশাঙ্কুর।ছোটোবেলা থেকে মুখচোরা ঘরকুনো ছেলেটির মধ্যে যে এতগুন তার পরিবারের কেউ জানেনা। চার ভাই বোনের মধ্যে সে মেজো। মেধাতেও মধ্য। দাদা আর ছোটো ভাই বোন দুজন খুব ভালো পড়াশুনায়। তারা যখন স্কুলের পরীক্ষায় অঙ্ক, বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো ভালো নম্বর নিয়ে আসত সে তখন ইতিহাসের পাতায অতীত খূঁজে বেড়াত। বাবা তো বলেই ফেলতেন ওর দ্বারা কিছু হবেনা।দাদা ডাক্তার হলো, ছোটো যমজ ভাইবোন দুটো ইঞ্জিনিয়ার। সবাই গ্রাম ছেড়ে বাইরে থাকে। আর সৌমেন বাবু গ্রামের হাই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক।তিনি গ্রামের বাড়িতে মা বাবা কে নিয়ে থাকেন, অকৃতদার।ওনার খবর কেউ খুব একটা রাখেনা। উনিও সবার কাছথেকে নিজেকে দুরে রাখেন। শুধু মায়ের কাছে সব কথা বলেন।হটাত তার এইভাবে সামনে আসার পিছনে একটা মজার গল্প আছে। এবারে তার ডাক্তার দাদা বৌদির একমাত্র ছেলে ক্লাস নাইন এ উঠেছে। স্কুল থেকে যে বই কিনতে বলেছে সেগুলো কিনতে গিয়ে দাদা হিস্ট্রি বইএর লেখকের নাম দেখে দোকানে জিজ্ঞাসা করে বইটা কেমন হবে।এই প্রশ্ন শুনে বইয়ের দোকানের মালিক নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বলেন -- কী বলছেন স্যার! এই লেখক যে নিচু ক্লাসের বই লিখেছেন এটাই অনেক।উনি তো গ্রাজুয়েশন লেভেলের নিচে লেখেন না। ছাত্রছাত্রীরা ওনার কাছে পড়তে পারলে নিজেদের ধন্য মনে করে।আরও বললেন যে প্রকাশক বইটা পাবলিশ করেছেন তার বিশেষ অনুরোধে উনি লিখেছেন।এতো সব শুনে দাদা রমেন ভাবছেন কে এই লেখক? ওনার ভাই নয় তো?উনি জিজ্ঞাসা করবেন কি করবেন না ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন যে এই লেখকের বাড়ি কোথায়? উনি কি করে এতকিছু জানলেন।আবার ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন আমি গেছিলাম ওনার বাড়িতে। প্রকাশক যে আমার বন্ধু।গ্রাম ভালবাসেন তাই উনি গ্রামের স্কুল এ পড়ান। খুব লাজুক প্রকৃতির মানুষ।বাঁকুড়ার এক গ্রামে ওনার বাড়ি। মা বাবার সঙ্গে থাকেন।গ্রামের নাম শুনে রমেন এর কাছে সব পরিস্কার হয়ে গেল। সে তো ভাবতে পারছে না।বাড়ি এসে স্ত্রী কে সব বলল। উনিও অবাক কারণ সাদামাটা দেওরটিকে কোনোদিন সেভাবে পাত্তা দেননি অতি আধুনিকা ডাক্তার বৌদি।সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে ভাই দীপেন আর বোন দীপশিখা কেও জানলেন সব ঘটনা। সবাই তো শুনে অবাক।ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছুটলেন রমেনবাবু।মা বাবা তো অবাক ওদের দেখে।বাবাকে সব বললেন তার মেজো ছেলের কথা। বাবার চোখে জল;মা বললেন তোরা কোনো দিনই ওকে কাছে ডাকিস নি জানবি কি করে যে তোদের ভাইটাও তোদের থেকে কোনো অংশে কম না। বরং বেশি, কারণ ও বড় বড় কলেজে পড়ানোর কাজ ও নেয়নি শুধু মাত্র গ্রাম ছেড়ে আমাদের ছেড়ে যেতে হবে বলে।এতো সব কথার মাঝে কখন ভাইপো গিয়ে তার প্রিয় কাকাই কে হাত ধরে সবার মাঝে নিয়ে এসেছে। বাবা ছেলের মাথায় হাত রেখে বলেন ক্ষমা করে দিস বাবা।এইভাবে বাড়ির সবাই ঘরকুনো ছেলেটা কে জানল।তারপর জা করার করেছে ভাইপো কুশাঙ্কুর। ওদের স্কুলের বার্ষিক প্রোগ্রামে একজন গুনী মানুষ কে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। ও স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে গিয়ে সব বলে । আর উনি তো খুশি হয়ে সৌমেন বসু রায় কে আনার দায়িত্ব ওকেই দেন।এভাবেই আত্মপ্রকাশ ঘটে আড়ালে থাকা প্রতিভার। সবাই চেনে লুকিয়ে থাকা লেখক কে।রাখি রায়-র কলমে আরও কিছু লেখাআরও পড়ুনঃ দাগ (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ কুঁড়ে ঘর থেকে ক্রিকেটের নন্দনকাননেআরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিসআরও পড়ুনঃ উত্তরণ (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাতআরও পড়ুনঃ মিঠির ডায়েরি (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- প্রথম পর্ব

জানুয়ারি ২৩, ২০২২
নিবন্ধ

Small Story: বাণপ্রস্থ (ছোট গল্প)

শিমুলতলি গ্রামের সবাই আজ ছুটে চলেছে তাদের ভগবান কে একবার শেষ দেখা দেখ্তে। আজ গ্রামের এতো উন্নতি যার জন্য সেই বাবাঠাকুর আজ তারার দেশে পাড়ি দিয়েছেন।লোকে লোকারন্য আজ তার প্রিয় বাণপ্রস্থের মাঠ। শহর থেকেও বহুমানুষ এসেছে।কিন্তু প্রশ্ন হলো কে এই মানুষটি? কেনই বা সবাই তার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছে।তিনি হলেন সুবিনয় রায়চৌধুরী,কলকাতা শহরের এক নামী কলেজের অধ্যাপক । এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়।আজকে তার জন্য মানুষের মনে তার জন্য এই বেদনার কারণ জানতে হলে ফিরে যেতে হবে পনেরো বছর আগে------সুবিনয় বাবু তখন অবসর নিয়েছেন বেশ কিছুবছর, তার স্ত্রী চারুলতা দেবী ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা । তিনিও মাস ছয় হলো অবসর নিয়েছেন। সুবিনয় বাবু অবসর সময় কাটাতে মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে যেতেন । সেখানে গিয়ে তার মনে হয় গ্রাম টা যেন অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এসব কথা তিনি জানান স্ত্রী চারুকে আর ঐ গ্রামেই একসঙ্গে বড়ো হয়ে ওঠা যে কজন বন্ধুর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে তাদের। তারাও সবাই কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।স্ত্রী অবসর নেওয়ার পর তারা ভাবতে থাকেন কিভাবে অবসর জীবনটা কাটান যায়। কারণ এতদিন সংসারের যাবতীয় কর্তব্য দুজনে খুব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। ছেলে মেয়েরা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ ক্ষেত্রে । সবার বিয়ে হয়ে গেছে। বেশ একটা সুখী পরিবার। কিন্তু তাদের মন অন্য কিছু চায়। সংসারে আর আটকে থাকতে চান না তারা। বন্ধুদের সঙ্গেও এই নিয়ে আলোচনা চলে।একদিন ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে ডেকে পাঠান বাড়িতে।সবাই হাজির কৌতূহলী হয়ে।কি কারণ হতে পারে কেউ আন্দাজ করতে পারছে না।অবশেষে বাবা মা হাজির হয়ে অপেক্ষার অবসান ঘটান। গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন তারা আগামী মাসে। ওখানেই তারা থাকবেন এবার থেকে।ছেলেরা চুপ করে শুনছে তাদের কথা অবাক চোখে।কেনো আমরা কি কোনো ভুল করেছি? জিজ্ঞাসা করে ছেলের বৌরা ।তাদের থামিয়ে দিয়ে সুবিনয় বাবু বলেন না না তোমরা আমাদের খুবই যত্নে রেখেছ।কিন্তু আমরা আর সংসারে থাকতে চাই না। এবার আমরা বাণপ্রস্থে যেতে চাই। তাই গ্রামের বাড়িতে একটা আশ্রম করছি। আমরা ছোটো বেলার কিছু বন্ধু একসঙ্গে থাকতে চাই । আবার ফিরে যেতে চাই সেই শৈশবে । আর যে গ্রামে আমরা বড়ো হয়েছি কিছু করে যেতে চাই তার জন্য।তাই আগামী মাসে আমরা আমাদের আশ্রম বাণপ্রস্থে চলে যাব।ছেলে মেয়েরা বাবার কোনো সিদ্ধান্ত কে কোনোদিন অসম্মান করেনি। কিন্তু আজ সবাই আপত্তি করলো। গ্রামের জন্য কাজ করতে চাও ভালো কথা । সেটা তো এখান থেকেই হয়।ওখানে গিয়ে থাকার কি খুব দরকার আছে? মেয়ের কথা শুনে চারুলতা দেবী বললেন সব কাজ দুর থেকে হয়না। তাছাড়া আমাদের এখন বাণপ্রস্থেরই সময়। তোমরা এখন নিজেরা সব সামলাতে চেষ্টা কর।আর কোনো কথা বাড়াল না কেউ।এর একমাস পরে তারা সবাই হাজির হলেন একে একে শিমুলতলিতে। তারা শুরু করেন ছেলে মেয়েদের পড়ানো, নানারকম হাতের কাজ শেখান। এইভাবে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।তারপর অনেকেই এসেছেন এখানে থাকতে। অবশ্যই যারা ওনাদের মত গ্রাম ভালবাসে, সেবা করতে চায় তারাই। এখন গ্রামের ছেলেমেয়েরা অনেকেই বাইরে কাজ করে।অনেক উন্নতি হয়েছে গ্রামের।এই সবই হয়েছে যার ঐকান্তিক ইচ্ছায় আর উদ্যগে তিনি হলেন সুবিনয় রায়চৌধুরী ।আজ তার খবর পেয়ে ছেলেমেয়েরাও এসেছে। তারা অবাক চোখে দেখ্ছে বাবা মা আর তাদের বন্ধুদের কর্মকান্ড।তারা কোনোদিনই গ্রামে আসেনি। আজ তারা অভিভূত গ্রামের মানুষদের আন্তরিকতায়।বাবার এই কর্মকান্ড তারা বুঝতেই পারেনি। আজ নিজেদের খুব ছোটো লাগছে। তিন ভাইবোন বাবার পায়ের কাছে বসা মাকে ঘিরে ধরে। মা বলে আজ তোরা শুধু নয় শিমুলতলি গ্রাম পিতৃ হারা হলো। এই কথায় ওরা আর নিজেদের রুখতে পারলো না । কেঁদে ফেলল ছোট্ট বাচ্ছাদের মত। বাবার পায়ে হাত দিয়ে শপথ করলো তিন জনেই আর আমরা দুরে থাকব না। বাবার এই আশ্রমের সব দায়িত্ব আজ থেকে আমাদের।দিনটা ছিল পিতৃদিবস ,বাবার প্রতি এটাই ওদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।।লেখিকাঃ রাখি রায়রাখি রায়-র কলমে আরও কিছু লেখাআরও পড়ুনঃ দাগ (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ কুঁড়ে ঘর থেকে ক্রিকেটের নন্দনকাননেআরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিসআরও পড়ুনঃ উত্তরণ (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাতআরও পড়ুনঃ মিঠির ডায়েরি (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- দ্বিতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- তৃতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- চতুর্থ পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)-অন্তিম পর্ব

ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
নিবন্ধ

The Spot : দাগ (ছোট গল্প)

একটা অস্পষ্ট কান্নার আওয়াজে হঠাৎ ঘুম টা ভেঙে গেলো রনিতের। চোখ খুলে দেখে রূপসা ঘুমের মধ্যেই কেমন করছে যেন কাঁদছে মনে হচ্ছে।ওকে ডাকে রানিত-- এই কি হলো তোমার রুশা? অমন করছো কেনো?মাত্র দুমাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।রনিতের ডাক রূপসা শুনতে পেল না। ও আপন মনে ঘুমের মধ্যেই বলতে থাকে ছাড় ছাড় আমাকে। আমার লাগছে।রণিত বোঝে না কি করবে। ওরা দুজনেই থাকে আর কেউ নেই যে ডাকবে।রণিত একটু জল নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দেয়। জলের ছিটে পেয়ে জেগে ওঠে রূপসা।কি হলো স্বপ্ন দেখছিলে? অমন করছিলে কেনো? আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। রনিতের এতো গুলো কথার কোনো উত্তর দেয়না রূপসা।শুধু হু আর হ্যাঁ বলে উঠে বাথরুমে যায়, চোখে মুখে জল দিয়ে এসে শুয়ে পড়ে ।রণিতও আর কিছু বলেনা। চুপচাপ শুয়ে পড়ে ।কিন্তু ভেবে পায়না কি হলো হটাত।এরপর খেয়াল করে রূপসা হটাত যেন চুপ করে গেছে। একটু যেন অন্যমনস্ক ।কাছে আসতে চায়না এড়িয়ে যায়।রণিত ওর অফিস কলিগ দেবেশ কে । সব শুনে দেবেশ বলে রূপসা কে আর একটু সময় দে। আর একটু ভালো করে ভরসা দিয়ে কথা বল।সেদিন সেই মত রণিত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে । রাতে খেয়ে নিয়ে বলে আজ বেশ ভালো চাঁদ উঠেছে চলো আমরা ব্যালকনিতে বসি।দুজন পাশপাশি বসে। রণিত রূপসার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে--- আমাদের মাত্র দুমাস হলো বিয়ে হয়েছে। এখনো ভালো করে দুজন দুজনকে হয়তো চিনে উঠিনি। কিন্তু এটুকু বলতে পারি আমি তোমার ভালো বন্ধু। তুমি আমাকে ভরসা করে সব বলতে পারো।রূপসা চুপ করে বসে থাকে রনিতের হাতটা শক্ত করে ধরে; আর চোখ দিয়ে জল ঝরতে থাকে।পরদিন অফিস গিয়ে দেবেশ কে বলে --- না রে কিছু বললো না; শুধু অসহায় ভাবে কাঁদে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।দেবেশ বললো দাঁড়া দেখছি আমি একবার মধুমিতার সঙ্গে কথা বলি। ও খুব ভালো কাউন্সিলার। আমরা খুব ভালো বন্ধু।বলে মধুমিতাকে ফোন করে--- হ্যালো মধু আমি দেবু বলছি রে, খুব দরকার তোকে । আমার কলিগ রনিতের কথা তো তুই জানিস। কিছুদিন আগে যার বিয়ে হলো। ও একটা সমস্যায় পড়েছে ওর বৌকে নিয়ে।তুই একদিন সময় দে আমার বাড়িতে।-------ঠিক আছে তাহলে রবিবার ওদের আসতে বলছি।এই পর্যন্ত কথা বলে দেবেশ রণিত কে বলে ব্যাস আর কোনো চিন্তা নেই তুই রবিবার আমার বাড়ি চলে আয় বৌকে নিয়ে।যথারীতি রবিবার রণিত রূপসা এসে হাজির হয় দেবেশ এর বাড়িতে। মধুমিতাও আসে। মধুমিতা রূপসার সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলে।ফিরে আসার সময় রূপসা মধুমিতাকে বলল আমি তোমার কাছে যাব। তোমাকে আমার খুব দরকার।এরপর এক সপ্তাহ কেটে যায়, রণিত খেয়াল করে মধুমিতকে রূপসার বেশ ভালো লেগেছে। একটু হলেও রূপসা স্বাভাবিক হয়েছে।শনিবার রাতে রূপসা রনিত্কে বলে কাল আমাকে একবার কাল মধুমিতাদির চেম্বারে নিয়ে যাবে?রণিত একটু অবাক হয়। বলে কালইযাবে?হ্যাঁ কালই যাব নাহলে যে দেরি হয়ে যাবে।রণিত কিছুটা হাল্কা হলো, কারণ নিয়ে তো যেতে হতই; কি করে ?সেটাই ভাবছিল।যাক নিজে থেকে যখন যেতে চাইল আর কোনো চিন্তা নেই।ও দেবেশ কে সব জানাল । দেবেশ ও খুশি হয়ে বলল ভালো কথা । আমি এখনই মধু কে বলে রাখছি।রবিবার সন্ধ্যাবেলায় রণিত আর রূপসা পৌঁছলো মধুমিতার চেম্বারে। মধুমিত ওদের বসালো।রবিবার সন্ধ্যায় রনিত আর রূপসা হাজির হয় মধুমিতার চেম্বারে। ওদের বসায়, তারপর এটা-সেটা কথা হয়।তারপর রুপসাকে নিয়ে পাশের ঘরে যায়। মৃদু আলোয় ঘরটা বেশ মায়াবি লাগে রূপসার।একটা হেলানো চেয়ারে বসিয়ে মধুমিতা বলে এখানেই আমি তোমার সব কথা শুনব।তারপর দেখি তোমাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি।এই কথায় রূপসা আরো ভরসা পায়।মধুমিত তখন ওকে আরাম করতে বলে বাইরে আসে রনিতের কাছে।রণিত তোমাকে ভিতরে ডাকলাম না কিছু মনে করো না। আসলে ও তোমার সামনে খুলে সব বলতে পারবে না। তুমি এই হেড ফোন কানে দিয়ে সব শুনতে পারবে এখান থেকে।না না সব ঠিক আছে, তুমি ও নিয়ে কিছু ভেবো না।ও ঠিক হোক তাহলেই আমার হবে।মধুমিতা আবার রূপসার কাছে গেল। এবার ও ওর কাজ শুরু করলো।রূপসা তুমি তোমার মনের গভীরে ডুব দাও। বলো আমায় তোমার কথা......তুমি কে? কি তোমার মনের গহিনে দাগ কেটেছে সব সব বলো।রূপসা আসতে আসতে ডুব দেয় মনের অতলে--চলে যায় ছোটো বেলায়......আমি রূপসা নন্দী। মা বাবার একমাত্র মেয়ে। আমরা থাকতাম শ্রীরামপুর বাবার অফিস কোয়ার্টারে। আর আমার দাদু ঠাকুমা থাকত গ্রামের বাড়িতে। আমি খুব চঞ্চল ছিলাম ছোটো বেলায়। মায়ের কাছে তাই খুব বকুনি খেতাম।আমি যখন ক্লাস ফাইভ এ উঠলাম মা সব সময় আমাকে বলত রূপু বড়ো হচ্ছ আর খালি গায়ে বাইরে বেরোবে না। কিন্তু আমার অবোধ মন শরীরের পরিবর্তন তখনো বোঝেনি।আমি আমার মতই খেলে বেড়াই ছুটে বেড়াই।সেবার রথের মেলায় বাবা গেছিল গ্রামের বাড়ি দাদুর শরীর খারাপ তাই দেখ্তে। আমাকে কে নিয়ে যাবে রথ দেখ্তে মায়ের শরীরটাও ভালো না।অথচ আমি কান্না জুড়েছি। সেই সময় আমাদের পাশের কোয়ার্টার থেকে সুজিত কাকু এসে মাকে বলল বৌদি আমি নিয়ে যাব রুপুকে? দাদা তো বাড়ি নেই। ও যখন কাঁদছে আমি নিয়ে যাই।মা একটু ইতস্তত করছে দেখে বলে কি হবে আমি ওকে মেলায় ঘুরিয়ে নিয়েই চলে আসবো দেরি হবে না। আমিও খুব আনন্দিত হলাম এই কথা শুনে।আমার তখন মেলা দেখা নিয়ে কথা। অথচ এই কাকুকে আমি খুব একটা পছন্দ করতাম না। কাকুর আদর-টা আমার ভালো লাগত না। কিন্তু তখন সব ভুলে গেলাম মেলা দেখতে যাওয়ার আনন্দে।মেলায় গিয়ে ঘুরে ফিরে আমাকে খেলনা,পুতুল কিনে দিল। আমার শিশু মন তো ল্হুব খুশী । কাকু তখন বলল নাগরদোলা চাপবি রূপু? আমি বললাম না গো আমার ভয় করে।ভয় কি আমি আছি তো। খুব মজা লাগে চল ।কাকু আর কোনো কথা না শুনে দুটো টিকিট কেটে একটা দোলায় চেপে বসল আমাকে নিয়ে।যেই নাগরদোলা চলতে শুরু করেছে ব্যাস আমার তো ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে যাওয়ার জোগাড় । আর তখন... তখন...তখন কি রূপসা? বলো কি হয়েছিল বলো আমায়। তোমার কোনো ভয় নেই।বলছি...... তখন কাকু আমাকে কোলে তুলে নেয়। আর তার শক্ত দুটো হাত দিয়ে আমার সদ্য প্রস্ফুটিত শরীরটা পিষতে থাকে। অদ্ভুত ভাবে কেউ কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। আমি ব্যথায় ছটফট করতে থাকি কিন্তু কাকু ছাড়ে না। আবার যখন উপরে উঠি নাগরদোলায় তখন আমার কোমল ঠোঁটের সব রাস যেন শুষে নেয়। ওফ কি ভয়ংকর সে মুহুর্ত। না না আর না, আর পারছিনা আমাকে ছাড়ো ছেড়ে দাও আমাকে...... চিৎকার করে ওঠে রূপসা।রূপসা শান্ত হও শান্ত হও। আর কেউ নেই, কিছু নেই। সব মুছে গেছে, তুমি এখন মুক্ত।তারপর রূপসা আবার বলতে শুরু করে......মেলা দেখে বাড়ি এসে আমি মাকে কিছু বলার আগেই কাকু বলে খুব ভয় পেয়েছে নাগরদোলায়। কাকু চলে যাওয়ার পর আমি যখন বলি আর কক্ষনো কাকুর সঙ্গে মেলায় যাব না। কাকু খুব বাজে। মা কিন্তু বুঝতেই পারেনা। ভাবে নাগরদোলয চাপিয়েছে বলে বলছি।আমরা তারপর ওখান থেকে চলে যাই অন্য জাযগায় বাবার বদলি হয়ে যায়। কিন্তু আমি আর রথের মেলায় যেতে পারি না।এবার আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে। রণিতদের ওখানেও রথের মেলা বসে। রণিত আমাকে নিয়ে যেতে চাইলে আমি না করতে পারি না। কিন্তু আমার মনের গভীরে যে দাগ রয়ে গেছে তা আবার আমাকে কষ্ট দিতে থাকে।রণিত কেও বলতে পারিনি; থামে রূপসা।তারপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মধুমিতা আবার বলে এবার আসতে আসতে চোখ খোল । দেখো সব ঠিক আছে একদম। তুমিও একদম ঠিক আছো।আসতে আসতে চোখ খোলে রূপসা।যেন মনের কোনে জমে থাকা মেঘ যেন হাল্কা হয়।ওদিকে রণিত রূপসার সব কথা শুনে খুব কষ্ট পায়।ভাবে কি গভীর দাগ কেটেছিল শিশু মনে যা আজও রূপসা কে কষ্ট দিচ্ছে। না ওকে আরো ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখ্তে হবে।সেদিনের মতো ওরা ফিরে আসে। মধুমিতা আবার যেতে বলে। এই ভাবে দুচার বার যাওয়ার পর রূপসা আবার আগের মতই আবার প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে।রণিতও ওকে আগলে রাখে বুক দিয়ে। রনিতের আদরে সোহাগে রূপসার মন থেকে মুছে যায় সব দাগ।আজ ওরা খুব সুখী দুজনে দুজনকে নিয়ে।রূপসা আর রনিতের নতুন পথ চলা শুরু............লেখিকাঃ রাখি রায়রাখি রায়-র কলমে আরও কিছু লেখাআরও পড়ুনঃ কুঁড়ে ঘর থেকে ক্রিকেটের নন্দনকাননেআরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিসআরও পড়ুনঃ উত্তরণ (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাতআরও পড়ুনঃ মিঠির ডায়েরি (বাংলা ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- দ্বিতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- তৃতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- চতুর্থ পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)-অন্তিম পর্ব

ডিসেম্বর ১২, ২০২১
  • ‹
  • 1
  • 2
  • ›

ট্রেন্ডিং

রাজ্য

১০০ দিনের কাজ নিয়ে হাইকোর্টে বড় ধাক্কা কেন্দ্রীয় সরকারকে

গতকালই ওবিসি মামলায় হাইকোর্টে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। এবার ১০০ দিনের কাজ নিয়ে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার নজিরবিহীন একটি নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। পশ্চিমবঙ্গে ফের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করতে হবে, এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১ আগস্ট থেকেই এই প্রকল্প চালু করতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ।উল্লেখ্য, বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা বহুদিন ধরে আটকে রেখেছে কেন্দ্র, এই অভিযোগ করে আসছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই ব্যাপারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বারবার সমালোচনায় সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্র বেশ কয়েকটি দলও বাংলার জেলায় জেলায় পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী আদালতে জানিয়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে গরমিল ধরা পড়েছে।। তার মধ্যে ২ কোটিরও বেশি টাকা পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। হুগলি, মালদা, বর্ধমান, দার্জিলিংয়ের মতো জেলাগুলিতে ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। ১০০দিনের কাজের প্রকল্পে টাকা বন্টনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে বেনজির দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রের।রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আটকে থাকা নিয়ে মামলার শুনানি বুধবার ছিল কলকাতা হাইকোর্টে। এদিন উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনেছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। এরপর প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন যে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্যই বিশেষ কোনও বেঁধে দিতে পারে কেন্দ্র। এই রায়ের পর সোচ্চার হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ১০০ দিনের পুরনো বকেয়া টাকা ফেরত দিতে হবে।

জুন ১৮, ২০২৫
রাজ্য

তোলা না দেওয়ায় গাছে বেঁধে কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধর

পাঁচ লক্ষ টাকা তোলা না দেওয়ায় গাছে বেঁধে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে মারধর এবং সালিশি করে গ্রাম ছাড়া করার অভিযোগ উঠলো স্থানীয় একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক থানার ফতেখানি এলাকায়। এই ঘটনায় আক্রান্ত ব্যবসায়ীর পরিবার কালিয়াচক থানার দ্বারস্থ হলেও চারদিন পরে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। অবশেষে বুধবার ওই ব্যবসায়ী দম্পতি সমস্ত ঘটনার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানালেন পুলিশ সুপারের কাছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। এদিকে কালিয়াচকের ওই ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণ এবং পাঁচ লক্ষ টাকা তোলাবাজির ঘটনায় রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ীদের সংগঠন মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বারবার যদি ব্যবসায়ীদের ওপর দুষ্কৃতীদের হামলা নেমে আসে, তাহলে আমরা যাব কোথায়। অবিলম্বে পুলিশ সুপার যাতে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে, সেই আবেদন জানাচ্ছি। এদিকে পুলিশকে অভিযোগে কালিয়াচক থানার ফতেখানি এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী মহম্মদ রহিম বিশ্বাস জানিয়েছেন, পুরনো একটি মামলার ঘটনায় গত শনিবার এলাকার এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী জহরুল খান এবং তার দলবল তাকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের একটি ডেরায় তাঁকে গাছে বেঁধে ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পাঁচ লক্ষ টাকার তোলা চাওয়া হয়। সেই টাকা না দেওয়ায় আশেপাশের আরও কিছু সাগরেদদের জুটিয়ে সালিশি ডাকা হয়। সেই সালিশির মাধ্যমে তাদের পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আর এই ঘটনার পর থেকেই গত চারদিন ধরেই ওই ব্যবসায়ী পরিবার নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন হয়ে রয়েছেন। এমনকি ফতেখানি স্ট্যান্ডের কাছে ওই ব্যবসায়ী তার নিজের পোশাকে শোরুম খুলতে পারছেন না।

জুন ১৮, ২০২৫
রাজ্য

বাংলা দিবস পালন নিয়ে বিজেপিকে কড়া তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বাংলা দিবস পালন নিয়ে ফের বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আগামী ২০ জুন বাংলা দিবস পালন করা হবে বলে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ সচিব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি দফতরকে একটি চিঠি দিয়েছে। আলাদা করে বাংলা দিবস পালনের দিন নির্ধারণ নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ইস্যুতে BJP-র কড়া জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০ জুন প্রতিটি রাজ্যের রাজভবনে বাংলা দিবস পালন করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এই তারিখ কীভাবে ঠিক করা হল? দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৫ আগস্ট। বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস আপনারা ঠিক করে দেবেন? বিজেপি ইচ্ছা মতো চাপিয়ে দেবে? এটা বাংলাকে চরম অসম্মান বলে আমরা মনে করছি। বাংলা দিবস বাংলার সরকার পালন করবে। সেটা ১ বৈশাখ।এদিন কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর আরও তোপ, সব বুলডোজ করছে, দেশে জুমলা সরকার চলছে। পেহেলগাঁওয়ের পর সবাই বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা বলেছে। বিরোধীরা সবাই অধিবেশন ডাকার কথা বলেছিল। কেন বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে না?একশো দিনের কাজের টাকা চার বছর ধরে বন্ধ করেছে। আবাস যোজনার টাকা দিচ্ছে না। রাজ্য সরকার নিজে সেই টাকা খরচ করে উন্নয়ন বজায় রেখেছে।

জুন ১৮, ২০২৫
রাজ্য

ভাগীরথী সেতুতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, লরির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে মৃত্যু রোগীর

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ভাগীরথী সেতুর উপর ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বুধবার দুপুরে চলন্ত লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক বৃদ্ধের। মৃতের নাম হরেন মণ্ডল (৬৩)। তিনি ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলার বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।জানা গিয়েছে, বুধবার সকালেই অসুস্থতা জনিত কারণে হরেন মণ্ডলকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূ। দুপুরে বৌমা ফুলতলা বাজারে ফল কিনতে গেলে অনেকক্ষণ কেটে গেলেও তিনি না ফেরায়, চিন্তায় পড়ে বৃদ্ধ খুঁজতে বের হন। খুঁজতে খুঁজতে উঠে পড়েন ভাগীরথী সেতুর উপর। সেই সময় এক চলন্ত লরির সামনে পড়ে যান তিনি। অসাবধানতাবশত লরির চাকায় পিষ্ট হন হরেন মণ্ডল। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ ও রঘুনাথগঞ্জ সদর ট্রাফিক গার্ড। কিছু সময়ের জন্য সেতুর উপর যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কী, লরি চালকের গাফিলতি ছিল কিনাতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এই দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরেও কি ভাবে রাজ্য সড়কে পৌছালো ঐ রুগী তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে একলাবাসীর মধ্যে।

জুন ১৮, ২০২৫
রাজ্য

রায়নার বিধায়কের কন্যার নামকরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী

রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারার শিশু কন্যার নামকরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভাতেই বিধায়ক শম্পা ধারা কন্যা সন্তান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে হাজির হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক শম্পা ধারার শিশু কন্যার নাম রাখেন ঐশী। আশাপূরণ হওয়ায় শম্পা ধারা বেজায় খুশি। মেয়ের অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠানের দিনও নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন বিধায়ক। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য শম্পা ধারা এদিন মুখ্যমন্ত্রী সহ সকল বিধায়ককে নিমন্ত্রণও করেন।শম্পা ধারার কন্যার এখন বয়স মাত্র সাড়ে চার মাস। বাংলার অগ্নিকন্যা তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত তাঁর কন্যার নামকরণ করে আশীর্বাদ করুন, এমনটাই স্বপ্ন ছিল রায়নার তৃণমূল বিধায়কের। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষে নিজের শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার দুপুরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের সামনে পৌছে যান পূর্ব বর্ধমানের বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী ঘর থেকে বের হতেই বিধায়ক শম্পা তাঁর কন্যার নামকরণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। নিজের দলের বিধায়কের সেই অনুরোধ ফেরাননি মুখ্যমন্ত্রী।শম্পা ধাড়া জানান, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি তাঁর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। শম্পা ধারার কথা অনুযায়ী নাম করণ করে দেওয়ার পর তাঁর মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশীর্বাদ করেছেন। এটাই তো তাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। এর জন্য তিনি গর্বিত বোধ করছেন।তাঁর খুব আনন্দও হচ্ছে।

জুন ১৭, ২০২৫
বিনোদুনিয়া

কেশরী চ্যাপ্টার টু, ইতিহাস বিকৃত করার ভয়ঙ্কর অভিযোগ

ইতিহাসের একটি পরিচিত অধ্যায় ইংরেজ শাসনের সময় বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকী কুখ্যাত ইংরেজ জাজকে বধ করার চেষ্টা করেছিল। এর ভিত্তিতে ক্ষুদিরাম বোসের ফাঁসি হয়েছিল এবং প্রফুল্ল চাকীও পুলিশের হাতে যাতে ধরা না পড়ে তার জন্য নিজের প্রাণ নিজের হাতে নিয়েছিল। বিধাননগর দক্ষিণ থানাতে অভিযোগ এসেছে যে একটি সিনেমা ইদানিংকালে লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে সিনেমাটির নাম হচ্ছে কেশরী চ্যাপ্টার টু। সেই সিনেমাটি জিও হটস্টারে দেখানো হচ্ছে লাইভ স্ট্রিমিং এর মাধ্যমে সেখানে একটা দৃশ্যে দেখানো হয়েছে যে ক্ষুদিরাম বোসের নামকে ক্ষুদিরাম সিং বলা হয়েছে এবং প্রফুল্ল চাকির সেখানে কোন উল্লেখ নেই।বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের ছোট ভাই বিরেন্দ্র কুমার ঘোষ তিনি ও বিপ্লবী ছিলেন উনার নামটাকে বারিন্দ্রা কুমার বলে বলা হচ্ছে। শুধুমাত্র ঐতিহাসিক তথ্যগুলোকে বিকৃত করা হয়নি, বরঞ্চ স্বাধীনতা সংগ্রামী যারা আছেন তাদের নামটাকে বিকৃত করে তাদের গরিমাটাকে কিছুটা হলেও ম্লান করার চেষ্টা হয়েছে এবং করা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একটা কেস করা হয়েছে। এটাও দেখানো হয়েছে খুদিরাম বোস এবং বারিন্দ্র ঘোষ ওনারা অমৃতসরের ছাত্র ছিলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটা করা হয়েছে। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বিধান নগর দক্ষিণ থানাতে একটি কেস রুজ করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।

জুন ১৭, ২০২৫
কলকাতা

ভূয়ো কল সেন্টারের পর্দা ফাঁস, বাগুইআটিতে গ্রেফতার ৬

গোপন সূত্রে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বাগুইহাটি থানা অধীনস্ত সৃষ্টি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায় বিধাননগর পুলিশের একটি দল এবং পর্দা ফাঁস করে একটি ভুয়ো কল সেন্টারের। অভিযুক্তরা বিভিন্ন রাজ্যে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং কম সুদে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কস্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিতো।স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে বাগুইআটি থানায় কেস নাম্বার ৩৮২/২০২৫ মামলা রুজু হয়। এই অভিযানে মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং উদ্ধার হয়েছে বহু বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। এই মামলার তদন্ত চলছে। ধৃতদের আজ আদালতে পেশ করা হলে তাদের প্রত্যেকের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর হয়। মামলার তদন্ত চলছে।

জুন ১৭, ২০২৫
রাজ্য

তৃণমূলের দলীয় বৈঠকে মমতাবালাকে কটুক্তির অভিযোগ, উপপ্রধানকে গ্রেফতারের দাবি

দলীয় বৈঠক তৃণমূল উপপ্রধানের গালাগাল ও কটুক্তির শিকার তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন তৃণমূল কর্মী। সরব হলেন মতুয়া ভক্তরা। পার্থ ভৌমিকের সম্পর্কে কিছু কথা বলার জন্যে কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, আর কিছু নয় বলে দাবি তৃণমূল জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের।একুশে জুলাই এর প্রস্তুতি সভা ছিল সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙ্গায়। অভিযোগ, সেখানে বক্তব্য রাখার সময় গোপালনগর চৌবেরিয়া ১ নাম্বার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুনীল সরকার মমতা ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেন। এমনকি বৈঠক শেষে মমতা ঠাকুর বাইরে বের হলে তাঁকে উদ্দেশ্য করে সুনীলসহ আরও কয়েকজন কটুক্তি করে এবং অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গি করে, এমনকি তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়। এবং ছোট জাত বলে আক্রমণ করা হয়। এই মর্মে সোমবার রাতে সব্যসাচী ভট্ট নামে এক তৃণমূল কর্মী গাইঘাটা থানায় এফ আই আর দায়ের করেন। অভিযোগ করার সময় সব্যসাচীর সঙ্গে ছিলেন মতুয়া ভক্তরা ও গোসাইরা। অভিযুক্তর গ্রেফতারের দাবি করেন তারা। তারা বলেন, মাকে গালাগালি দেওয়া মানে আমাদের মতুয়া সমাজকে গালি দেওয়া। এটা আমরা কোনওভাবেই মেনে নেব না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা হয় তাহলে তীব্র প্রতিবাদ হবে।এই বিষয়ে অভিযুক্ত চৌবেড়িয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুনীল সরকার জানিয়েছেন, মমতা ঠাকুর বক্তব্য রাখতে গিয়ে নানা কথার মধ্যে দিয়ে জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস ও পার্থ ভৌমিককে আক্রমণ করছিল। আমি শুধু প্রতিবাদ করে বলেছি আপনাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের বৈঠকে এটা আলোচনা করবেন। আমি যদি উনাকে গালাগাল করে থাকি সেটা প্রমাণ করুক। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও বনগাঁ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, গতকাল একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় চেয়ারম্যান পার্থ ভৌমিক সম্পর্কে কিছু কথা বলাতে কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আর কিছু নয়। তৃণমূলের সভায় মমতা ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল ও জাত তুলে কটুক্তি নিয়ে কটাক্ষ করা প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর বলেন, ওদের নেত্রী হরিচাঁদ গুরুচাঁদ নিয়ে যা বলেছেন তাতে ছোট নেতা কি বলবে। মমতা ঠাকুর হারিকাঠে গলা দিয়েছে, কি হবে বুঝতে পারছে না। ওর লজ্জা ঘৃণা ভয় কিছু নেই। এই বিষয়ে মমতা ঠাকুরবালার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জুন ১৭, ২০২৫

Ads

You May Like

Gallery

265-year-old "Mukhopadhyay House" in Bhavanandpur, Kalnar, played vermilion on Dasami during Durga Puja
BJP candidate Locket Chatterjee campaigned on the banks of the Ganges from Chandannagar Ranighat to Triveni Ghat wishing New Year.
A living depiction of history with a touch of color, everyone is enthralled by the initiative of the Eastern Railway
Sucharita Biswas actress and model on Durga Puja
Lord Kalabau came up in palanquin; Navapatrika walked towards the mandap - the puja started
On Sunday, the 'Hilsa festival' is celebrated in the city with great joy.
Check out who has joined Mamata's new cabinet
Take a look at the list of recipients at the Bangabibhushan award ceremony
If you are grassroots, you will get ration for free. Lakshmi Bhandar, Kanyashree, Swastha Sathi, Krishakbandhu, Oikyashree, Sabujsathi — you will get all.

Categories

  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও

Company

  • About Us
  • Advertise
  • Privacy
  • Terms of Use
  • Contact Us
Copyright © 2025 Janatar Katha News Portal