উত্তরবঙ্গে ফের চাঞ্চল্য! শ্রমিকের ছদ্মবেশে সেনা ছাউনিতে ঢোকার চেষ্টা করে ধরা পড়ল এক বাংলাদেশি নাগরিক। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির বাগডোগরা এলাকার ব্যাঙডুবি সেনা ছাউনিতে। ধৃতের নাম নন্দ মণ্ডল। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই ব্যক্তি সেনা ছাউনির গেটের কাছে ঘোরাঘুরি করছিলেন, সেই সময়ই তাঁকে আটক করে পুলিশ। প্রথমে নিজেকে ‘নির্মাণ শ্রমিক’ বলে দাবি করলেও, জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
বাগডোগরা থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নন্দ মণ্ডল কোনও বৈধ পরিচয়পত্র বা নথি দেখাতে পারেননি। তাঁর কথাবার্তা এবং উপস্থিতির সময় নিয়েও সন্দেহ জাগে পুলিশের। এরপরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সেনা গোয়েন্দা বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। আপাতত দফায় দফায় চলছে জেরা। তবে কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কার নির্দেশে তিনি সেনা ছাউনিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। পুলিশ এবং সেনা গোয়েন্দারা মনে করছেন, এর পেছনে থাকতে পারে গুপ্তচরবৃত্তি বা নাশকতার ছক।
এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগে, গত ২৮ মে ভোরে একই এলাকায়—ব্যাংডুবির এমইএস মোড়ে—আরও এক বাংলাদেশি নাগরিককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে আটক করেছিল সেনা জওয়ানরা। তিনিও পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা। সেই ঘটনার পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ফের একই জায়গায় আরেক বাংলাদেশির ধরা পড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি এবং তার আশপাশের অঞ্চল দেশের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা। এখানেই রয়েছে ‘চিকেনস নেক’ বা ‘শিলিগুড়ি করিডর’—ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা একমাত্র সরু স্থলপথ। এই করিডর জুড়েই রয়েছে সেনা ঘাঁটি, এয়ারবেস, এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকাঠামো। সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের রংপুর ডিভিশনের লালমনিরহাট এলাকায় চিন একটি এয়ারবেস তৈরি করছে, যা শিলিগুড়ি করিডর থেকে মাত্র কয়েকশো কিলোমিটার দূরে। সেই প্রেক্ষিতে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা কেন্দ্র ও রাজ্যের নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে কড়া নজরদারিতে যেতে বাধ্য করেছে।
রাজ্য গোয়েন্দারা আগেই সতর্ক করেছিলেন যে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ এবং বিদেশি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। এখন এই নতুন ঘটনার পর গোটা এলাকা জুড়ে উদ্বেগ বেড়েছে বহুগুণ। সেনা, বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃত বাংলাদেশির মোবাইল, যোগাযোগের ইতিহাস ও যাতায়াতের রুট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেনা ছাউনির মতো সুরক্ষিত এলাকায় এভাবে বিদেশির প্রবেশের চেষ্টা যে নিরাপত্তার বড় ফাঁকফোকর, তা মানছেন পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরাও।
এই ঘটনার তদন্ত এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে যেতে পারে বলেও সূত্রের খবর। কারণ, দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সবচেয়ে সংবেদনশীল করিডরের পাশে বারবার বিদেশি অনুপ্রবেশ এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনঃ Fire Breaks Out: ধোঁয়ার ঢাকল রাস্তা, দমকল পৌঁছুতে দেরি — দাউ দাউ করে জ্বলছে ডালহৌসির ওয়ার্কশপ!
- More Stories On :
- Bangladeshi
- Arrested
- Army Camp

