পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (POK) ফের দাউদাউ করে জ্বলছে জনরোষ। ক’দিন আগেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল এই অশান্ত ভূখণ্ড। এবার সেই আগুন ছড়িয়েছে নতুন প্রজন্মের হাতে— ক্লাসরুম থেকে রাস্তায় নেমেছে ‘Gen Z’। শুরুতে প্রতিবাদ ছিল কেবল শিক্ষাব্যবস্থা ও ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে, কিন্তু দিন গড়াতেই সেই ক্ষোভ রূপ নিয়েছে শেহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র জনআন্দোলনে।
মুজাফফরাবাদে একসময় যে মিছিলগুলো ছিল শান্তিপূর্ণ, তা এখন যেন রণক্ষেত্র। সূত্রের খবর, বিক্ষোভ চলাকালীন হঠাৎই এক বন্দুকধারী ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একজন গুরুতর আহত হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে— পুলিশের উপস্থিতিতেই এক ব্যক্তি বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি চালাচ্ছে, আর মুহূর্তের মধ্যেই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।
এই গুলির ঘটনাই বদলে দিয়েছে আন্দোলনের মোড়। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে, শেহবাজ শরিফ সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছে। ‘আমরা চুপ থাকব না’— এমন স্লোগানে মুখর মুজাফফরাবাদের আকাশ। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও বাংলাদেশে Gen Z তরুণদের মতোই এখানে যুব সম্প্রদায়ের তীব্র ক্ষোভ স্পষ্ট।
সবকিছুর শুরু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্রমাগত বাড়তে থাকা টিউশন ফি ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার অভাবে ক্ষোভ উগরে দেয় ছাত্ররা। প্রশাসন প্রথমে আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে দেগে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু এই দমননীতি উলটে আগুনে ঘি ঢালে।
এটাই প্রথম নয়। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেও একই ধরনের আন্দোলন হয়েছিল। তখনও ছাত্ররা অভিযোগ করেছিল— প্রশাসন তিন-চার মাস অন্তর লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে ‘সেমিস্টার ফি’ নামে। পরে আন্দোলনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও, যাঁরা দাবি করেন, তাঁদের বহুদিনের বকেয়া বেতনও মেটানো হয়নি।
এবারের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে স্কুল স্তরের ছাত্ররাও। তাঁদের ক্ষোভ নতুন ‘ই-মার্কিং’ বা ডিজিটাল মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। অক্টোবরের ৩০ তারিখে ঘোষিত ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরেই রাগে ফুঁসে ওঠে গোটা অঞ্চল। ছ’মাস দেরিতে প্রকাশিত ফলাফলে ছাত্রছাত্রীরা দেখে— কেউ অপ্রত্যাশিতভাবে ফেল করেছে, আবার কেউ পাস করেছে এমন বিষয়ে যার পরীক্ষাতেই বসেনি!
সরকার এখনও মুখ খোলেনি। তবে মিরপুর শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, তারা ‘ই-মার্কিং’ প্রক্রিয়ার উপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তাতে শান্ত হয়নি ছাত্ররা। তাঁদের দাবি, পুনর্মূল্যায়নের ফি সম্পূর্ণ মাফ করতে হবে। কারণ বর্তমানে প্রতিটি বিষয়ের রিচেকিং ফি ১,৫০০ টাকা। অর্থাৎ সাতটি বিষয়ে পুনর্মূল্যায়ন চাইলে একজন ছাত্রকে গুনতে হবে ১০,৫০০ টাকা— যা মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে অসম্ভব।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই ছাত্র আন্দোলন এখন গোটা অঞ্চলে বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মুজাফফরাবাদ থেকে মিরপুর পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে একই স্লোগান— “আমাদের ভবিষ্যৎ ফেরত দাও!”। প্রশাসনের কড়া দমননীতি, পুলিশি হুমকি, এমনকি গুলি— কিছুই থামাতে পারছে না তরুণদের রাগ।
আরও পড়ুনঃ Donald Trump: “পৃথিবী ১৫০ বার ধ্বংস করতে পারি”—ট্রাম্পের বিস্ফোরক হুমকি!

